গড় পাস ৮৭.০৪, জিপিএ-৫ লক্ষাধিক

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ ফল হস্তান্তর করেন।
urgentPhoto
আটটি সাধারণ বোর্ড এবং মাদ্রাসা, কারিগরিসহ মোট ১০ বোর্ডের গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক শূন্য ৪ ভাগ। গত বছর এই ১০ বোর্ডের গড় পাসের হার ছিল ৯১ দশমিক ৩৪ ভাগ।
এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন শিক্ষার্থী। তবে গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল এক লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন। এবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৯৫টি।
এ বছর পাসের হার সবচেয়ে বেশি রাজশাহী বোর্ডে, ৯৪ দশমিক ৯৭ ভাগ এবং সবচেয়ে কম সিলেট বোর্ডে, ৮১ দশমিক ৮২ ভাগ।
ঢাকা বোর্ড থেকে এবার তিন লাখ ৪৯ হাজার ৭৪০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ৪৬ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৫ ভাগ।
রাজশাহী বোর্ড থেকে এবার এক লাখ ২৭ হাজার ৫২০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ১০৮ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৯৭ ভাগ।
কুমিল্লা বোর্ড থেকে এবার এক লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার ৭৬৫ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ২২ ভাগ।
যশোর বোর্ড থেকে এবার এক লাখ ২৮ হাজার ১৭৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ সাত হাজার ৬৯৮ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ০২ ভাগ।
চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে এবার ৮৮ হাজার ৪৬৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৩ হাজার ২২১ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ৭৭ ভাগ।
বরিশাল বোর্ড থেকে এবার ৭০ হাজার ৪৫৬ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫৯ হাজার ৪৪৬ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩৭ ভাগ।
সিলেট বোর্ড থেকে এবার ৭২ হাজার ২৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৩২ জন। পাসের হার ৮১ দশমিক ৮২ ভাগ।
দিনাজপুর বোর্ড থেকে এবার এক লাখ ২৬ হাজার ৫৩২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ আট হাজার ১৮৯ জন। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৫০ ভাগ।
মাদ্রাসা বোর্ড থেকে এবার দুই লাখ ৫৪ হাজার ৬২২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে দুই লাখ ২৯ হাজার ৬৬৬ জন। পাসের হার ৯০ দশমিক ২০ ভাগ। গত বছর এ হার ছিল ৮৯ দশমিক ২৫ ভাগ। এ বোর্ডে এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৩৩৮ জন। গত বছর পেয়েছিল ১৪ হাজার ১৩ জন।
কারিগরি বোর্ড থেকে এবার এক লাখ ১০ হাজার ২৮৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ৯১ হাজার ৪৫৭ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ০১ ভাগ। গত বছর এ হার ছিল ৮১ দশমিক ৯৭ ভাগ। এ বোর্ডে এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৯৩২ জন, গত বছর এ সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৯৫০ জন।
ফলাফল হাতে পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তারপরও নির্ধারিত সময়ে ফল প্রকাশ যুগান্তকারী সাফল্য। হরতাল-অবরোধ না থাকলে পাসের হার আরো বাড়ত।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এবার খুব অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু ফলাফলে এর প্রভাব পড়েনি।’
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, এবারের মতো এত আতঙ্ক, ভয় ও উদ্বেগের মধ্যে আগে কখনো পরীক্ষার্থীদের পড়তে হয়নি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই এবার ভীতির মধ্যদিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। একটি পরীক্ষাও তারা নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দিতে পারেনি।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকা হরতাল ও অবরোধ এবং সেই সঙ্গে পেট্রলবোমা হামলা ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকদেরও আতঙ্ক ও ভীতির মধ্যে থাকতে হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সরকারকেও বারবার পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হয়েছে। এতে ১১ মার্চ যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা, তা শেষ হয় ২৩ দিন পর ৩ এপ্রিল।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গতবারের তুলনায় এবার গড় পাসের হার ও জিপিএ ৫ ও দুই-ই কমেছে। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার কারণেই এবারের সামগ্রিক ফলাফলে এই নেতিবাচক প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
এবার ছেলেরা পাসের হার ও জিপিএ ৫ উভয় ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী নাহিদ বলেন, সাত লাখ ৬১ হাজার ৬৩০ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৭৬৪ জন। ছেলেদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪১ ভাগ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬০ হাজার ৩৭০ জন ছাত্র। আর সাত লাখ ১১ হাজার ৯৬৪ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ছয় লাখ ১৬ হাজার ৮৫৪ জন। তাদের পাসের হার ৮৬ দশমিক ৬৪ ভাগ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫১ হাজার ৫৩১ জন ছাত্রী।
দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মাধ্যমে ফল জানতে পারে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট (www.educationboardresults.gov.bd) থেকে মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানা গেছে। মোবাইল ফোন থেকে ফল জানতে মেসেজ অপশনে গিয়ে পরীক্ষার নাম (ssc/alim/tec) লিখে স্পেস দিয়ে ইংরেজিতে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পাসের সান ২০১৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি মেসেজে ফল জানা যাবে।