ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর ডুয়েট বন্ধ, হল ছাড়ার নির্দেশ

গাজীপুরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) হলের আসন দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে।এ ঘটনার পর পরিস্থিতি অবনতির আশংকায় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।
সংঘর্ষে ছাত্রলীগের উভয়পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। এ সময় তারা আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন ছাত্র জানান, দুপুরে কুদরত-ই-খুদা হল থেকে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বাশারের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাসির উদ্দিনের সমর্থকরা মারধর করে ছাত্রলীগকর্মী রুহুল আমিনকে বের করে দেয়।রুহুল আমিন ইইই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আর বাশার পড়েন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রহমান রাতুলের সমর্থকরা ঘটনাটির প্রতিবাদ জানাতে ওই হলে যায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, একপর্যায়ে উভয়পক্ষের কর্মী ও সমর্থকরা লোহার রড, লাঠি-বটি-দা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর ও তছনছ করে। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের ধাওয়া খেয়ে সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান নেয়। সংঘর্ষে গুরুতর আহত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র চঞ্চল কুমার ও ইইই বিভাগের একই বর্ষের ছাত্র মাসুদ রানাকে প্রথমে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাদের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ ছাড়া আহত হন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং চতুর্থ বর্ষের দেবজিৎ চন্দ্র আকাশ, একই বর্ষের ছাত্র রাকিব হোসেন লিংকন, জুয়েল বিশ্বাস, সফিকুর রহমান ও সোলায়মান এবং ইইইর ছাত্র গিয়াস উদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পর সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত চঞ্চল কুমার মারা গেছেন, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
এদিকে, ডুয়েটের পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) প্রফেসর ড. মো. কামরুজ্জামান জানান, দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠেয় সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ছাত্রদের এবং আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে।
এ ছাড়া সংঘর্ষের খবর পেয়ে জয়দেবপুর থানা পুলিশ জল কামান ও রায়ট কারসহ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন জানান, শিবিরকর্মী রুহুল আমিনকে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার পর সাধারণ সম্পাদকের ছত্রচ্ছায়ায় পুনরায় সে হলে ওঠে। সোমবার সাধারণ ছাত্ররা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে প্রতিপক্ষরা তাদের ওপর হামলা চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রহমান রাতুল ওই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ছাত্রলীগকর্মীকে শিবিরকর্মী হিসেবে অপপ্রচার চালাচ্ছে প্রতিপক্ষ।
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত আহত ছাত্র চঞ্চল কুমারের অবস্থা আশঙ্কাজনক।