সেলিম ওসমানের দেশে থাকার অধিকার নেই

নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তার ও সংসদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশের ৩৭ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধনে ফেডারেশন ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনায় আমরা লজ্জিত। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার জন্য সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তার ও সংসদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করতে হবে। সংসদ সদস্য হিসেবে থাকার নৈতিক অধিকার তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর রাজনীতি করার অধিকার নেই। এ দেশে থাকার অধিকার নেই।’ সংসদ থেকে সেলিম ওসমানকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য স্পিকার এবং জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কারের আহ্বান জানান।
আগামীতে এসব ঘটনা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে এ শিক্ষক নেতা বলেন, ‘বারবার শিক্ষকরা হত্যা, লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। এসব ঘটনার আমরা প্রতিবাদ করব না, এখন থেকে প্রতিরোধ করব। রাজনীতির নামে নারায়ণগঞ্জের অপশাসন চালাচ্ছে। এসব ঘটনা প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘একটি চক্র দেশেকে এবং শিক্ষা পরিবারকে অশান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে কারা এ দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকারকে লক্ষ রাখতে হবে। এ ঘটনা হচ্ছে একটা চক্রান্ত। লেবাস লাগানো হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতির।’ এ ঘটনায় সেলিম ওসমানকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান তিনি।
মাকসুদ কামাল বলেন, ‘এ ঘটনায় স্কুল ধ্বংসের চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করতে হবে এবং জাতীয় সংসদে সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনতে হবে।’ তাঁর সদস্য পদ বাতিল করে স্বল্প সময়ের মধ্যে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তিনি।
অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য আইন প্রণয়নে দিকনির্দেশনা দেন। তিনি একজন মানুষ গড়ার কারিগরকে অপদস্ত করে জঘন্য কাজ করেছেন। ইসলামকে নতুন করে আবিষ্কার করা হচ্ছে। মিথ্যা উক্তিকে কেন্দ্র করে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তার আত্মমর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে জীবিত অবস্থায় মৃত করে রাখা হলো।’
অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ, স্তম্ভিত। একজন শিক্ষককে কান ধরে ওঠবস করার দৃশ্য দেখার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। এ স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা চায়নি। এ অপমান বাংলাদেশের পুরো শিক্ষক সমাজের অপমান। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তার চাকরি হয়তো আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব, আত্মসম্মান কি আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব? তিনি সেলিম ওসমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
অধ্যাপক ড. আ জ ম শফিউল আলম ভূইয়া বলেন, ‘সেলিম ওসমান এই কর্মকাণ্ড করার মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি থেকে জনদুস্যতে পরিণত হয়েছেন। শিক্ষক তো দূরের কথা একজন সাধারণ মানুষকে এভাবে অপমান করার দায়ে অভিশংসন প্রস্তাব আনার জন্য স্পিকার এবং সংসদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ নিজামুল হক ভূইয়া, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. অসীম সরকার, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মশিউর রহমান, সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির, অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান প্রমুখ।