স্মার্টফোন দিয়ে আয় করার কিছু উপায়!

স্মার্টফোনের প্রতিনিয়ত উন্নয়নের কারণে মোবাইল ফোন দিয়ে আয় করার ব্যাপারটা ক্রমেই সহজ হয়ে উঠছে। উপযোগী বিকল্প হিসেবে ডেস্কটপ কম্পিউটারের স্থান দখল করে নিচ্ছে মোবাইল ফোনগুলো। প্রতিটি ওয়েবসাইটের ডেস্কটপ ভার্সনের পাশাপাশি মোবাইল ভার্সনও হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে।
ওয়েব অ্যাপলিকেশনগুলো স্মার্টফোনের ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়ায় আপনি পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন। মুহূর্তেই যোগাযোগ করতে পারছেন আপনার গ্রাহক ও ব্যবসায়িক পার্টনারদের সাথে।
আর এরই ধারাবাহিকতায় তৈরি হচ্ছে নতুন আয়ের উৎস। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের বিপর্যস্ত আর্থ-সামাজিক অবস্থার পাশাপাশি আয়-রোজগার নিয়ে মানুষের সংকীর্ণতার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে কিছু ভুল ধারণা। ফলশ্রুতিতে যারা অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করছেন তাদের অধিকাংশই পরিচালিত হচ্ছে ভুল পথে।
মোবাইল ফোন দিয়ে আয় করার সঠিক উপায়
আপনাকে অবশ্যই এমন কাজ বাছাই করতে হবে যা করার মাধ্যমে আপনি একটি নির্ভরযোগ্য ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। যে কাজটি করার মধ্য দিয়ে আপনার একটি পরিচয় তৈরি হবে। সর্বোপরি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে সেই কাজটির চাহিদা যেন কখনোই শেষ হয়ে না যায়। চলুন, অনলাইনে এরকম কিছু কাজের কথা জেনে নিই।
ইউটিউব ভিডিও তৈরি
অনলাইন কন্টেন্ট মূলত ৪ প্রকার। টেক্সট, ছবি, অডিও এবং ভিডিও। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ভিডিও কন্টেন্ট। আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী তা নিয়ে একটি সুন্দর ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করতে পারেন। মোটামোটি ভালো ক্যামেরার একটি স্মার্টফোন আর আপনার সৃজনশীলতা যথেষ্ঠ ইউটিউবে ভিডিও বানানোর জন্য। এর জন্য আপনার একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে হবে। আর আয়ের জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্ত পূরণ হলে আপনার চ্যানেলটি আয়ের জন্য উপযুক্ত হয়ে যাবে। ইউটিউবের নির্দেশনা মেনে আপনার ভিডিও কন্টেন্ট ভালো হলে খুব দ্রুতই আপনি একজন ইউটিউবার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
অনলাইনে লেখালেখি
টেক্সট কন্টেন্ট ভিডিওর থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক নিচের দিকে হলেও সার্চ ইঞ্জিনের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই অনলাইনে কন্টেন্ট রাইটারদের চাহিদাও প্রচুর। মোবাইল দিয়ে বিভিন্নভাবে আপনি এই কন্টেন্ট রাইটিং করতে পারেন।
ব্লগিং
আপনার ভালো লাগার বিষয়টি নিয়ে আপনি নিজের একটি ব্লগ তৈরি করতে পারেন। ফ্রিতে শুরু করতে চাইলে আপনি Blogger.com ব্যবহার করতে পারে। এটি গুগলের একটি সার্ভিস এবং সবচেয়ে ইউজার ফ্রেন্ডলি। ব্লগ থেকে ইনকাম আসে গুগল অ্যাডসেন্সের রেভেনিউ শেয়ারের মাধ্যমে। আপনার ব্লগে দেখানে অ্যাডগুলোতে আপনার ব্লগের দর্শক বা পাঠকরা ক্লিক করলেই আপনার আয় হতে থাকবে।
নিজস্ব ব্লগ ছাড়াও আপনি অন্য ব্লগে লেখালেখি করে আয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কিভাবে কন্টেন্ট রাইটিং করতে হয়। মোবাইল দিয়ে কন্টেন্ট রাইটিং প্রথমে একটু কষ্টসাধ্য হলেও পরবর্তীতে আয়ত্ত্বে চলে এলে আপনি খুব সহজেই ব্লগিং করতে পারবেন। অফ পেজ এসইও’র একটি বড় অংশ এই গেস্ট ব্লগিং।
সোশ্যাল মিডিয়াতে লেখালেখি
ফেসবুক, টুইটারের মতো জনপ্রিয় অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে মোবাইল দিয়ে লেখালেখি করে আয় করতে পারেন। অবশ্য আপনার একটি নিজস্ব ব্লগ থাকলেও তার প্রচারের স্বার্থে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে হয়। ফেসবুকে আপনার নিজস্ব একটি পেজ বা গ্রুপ খুলে তাতে লেখালেখি করতে পারেন। সব সময় খেয়াল রাখবেন, আপনার বিষয়বস্তু যেন অবশ্যই আপনার পাঠকদের উপকারে আসে।
ছবি বিক্রি
আপনার হ্যান্ডসেটটির যদি খুবই ভালো মানের ক্যামেরা থাকে, তাহলে এই মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে ছবি বিক্রি করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। অনলাইনে এরকম বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে যেগুলোতে ছবি বিক্রি করা যায়। তাছাড়া ফটোগ্রাফি আপনার প্রিয় কাজ হলে শুধুমাত্র এই ছবি দিয়ে আপনি অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। আপনি বিভিন্ন ফটোগ্রাফি কন্টেস্টেও অংশগ্রহণ করতে পারেন।
ডেলিভারি সার্ভিস
আমাদের দেশে ই-কমার্স ব্যবসাগুলো বেশ জমজমাট। অনলাইনে খাবারের ব্যবসা থেকে শুরু করে এমন আরও অনেক রকমের ব্যবসা আছে, যার মাধ্যমে মানুষের কাছে হোম ডেলিভারি দিতে হয়। ফলে তাদের প্রয়োজন পড়ে ডেলিভারি ম্যান-এর। এক্ষেত্রে আপনি আপনার মোবাইলে তাদের অ্যাপ ডাউনলোড করে ডেলিভারি সার্ভিস এর কাজ টি শুরু করে দিতে পারেন। এই কাজ টি করে আপনি প্রতিমাসে মোটামুটি ভাল মানের টাকা আয় করতে পারবেন। শহরে হলে সেই টাকার পরিমাণটা আরেকটু বেড়ে যাবে।
অনলাইন মেন্টরিং
আপনার যদি নির্দিষ্ট কোন বিষয় সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান থাকে তাহলে আপনি তা অনলাইনের মাধ্যমে অন্যদের শিখাতে পারেন। প্রতি ব্লগারই তাদের সাইটে এরকম মেন্টরশীপের একটা আলাদা ওয়েব পেজ রাখে। এর মাধ্যমে তারা ব্যাচ তৈরি করে তাতে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন নেন। অতঃপর তাদের কোনও কিছু শেখানোর মাধ্যমে তারা আয় করে থাকেন। বর্তমানে অনলাইন মিটিং-এর উন্নতির ফলে এধরনের মেন্টরিং আগে থেকে অনেক সহজ হয়ে দাড়িয়েছে।
রিসেলিং ব্যবসা
অনলাইনে অনেক ই-কমার্স সাইট তাদের পণ্যগুলো রিসেলিং-এর সুবিধা দিয়ে থাকে। এখানে আপনার প্রয়োজন হবে কোনো ইনভেন্টরি, কোনো অফিস। আপনি আপনার বাসাতে থেকেই শুধু মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে রিসেলিং করতে পারেন। ওয়েবসাইটে ইতোমধ্যেই আপনার জন্য সহজলভ্য পণ্যসমূহ আপলোড করা থাকে। সেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দমত যেকোনো একটা বাছাই করে নতুন দামে বিক্রি করতে পারেন। এ থেকে লাভের অংশটাই হলো আপনার আয়। সম্প্রতি ShopUp এবং Meesho নামে রিসেলিং অ্যাপ দুটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। এই ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য আপনার প্রয়োজন একটি উপযুক্ত অনলাইন নেটওয়ার্ক।
প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা
ইন্টারনেট জুড়ে মার্কেটিং এর আধিক্য এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের অসদ্ব্যবহারের কারণে কিছু ভুল কর্মকান্ডের দিকে অনেকেই ঝুঁকে পড়ছেন অনলাইনে আয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে। চলুন দেখে নিই তার কিছু অংশ।
বিভিন্ন অ্যাপ থেকে আয়
অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস উভয় অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা হয় অ্যাপগুলো। ফলে সিংহভাগ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এগুলো খুব সহজেই পেয়ে যায়। আপনি এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করে মাসে খুবই সীমিত পরিমাণ আয় করতে পারবেন। কিন্তু এর স্থায়ীত্ব বেশি দিন থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা, এগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার নিজস্ব কোন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। আর পরবর্তীতে নতুন তৈরিকৃত এই অ্যাপগুলোর মার্কেটিং শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন এগুলো থেকে আয়ও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এগুলোর উপর নির্ভর করে আপনার অনলাইন ক্যারিয়ার তৈরি তো হচ্ছেই না বরং সাময়িক কিছু রোজগারের আশায় যে সময়টুকু আপনি এখানে দিচ্ছেন তার পুরোটাই বিফলে যাচ্ছে। কারণ এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে আপনার কোন স্কিল ডেভেলপ হবে না।
এগুলোর মধ্যে যে অ্যাপগুলো খুব বেশী ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে- Swagbucks, Google Opinion Rewards, Pocket Money, Current Rewards, TaskBucks, Make Money App, BTCClicks, Inboxdollars, PaidVerts, NeoBux।
এগুলোতে মূলত যে কাজগুলো করার মাধ্যমে আয় হয় তা হচ্ছেঃ সার্ভে তে অংশ নেয়া, আরেক জনকে অ্যাপটি রেফার করা, ভিডিও দেখা বা ডাউনলোড করা, গেম খেলা ও ডাউনলোড করা, অ্যাডে ক্লিক করা, সাইন-আপ এবং যে কোনো কন্টেন্ট লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করা।
আপনি যেভাবেই মোবাইল ফোন দিয়ে আয় করার চেষ্টা করুন না কেন, সব মাধ্যমেই আপনার পরিশ্রম ও সময় দিতে হবে। কোনটাই রাতারাতি সম্ভব নয়। একদম শুরুর দিকে আপনার উচিৎ হবে যে কোনও একটি নির্দিষ্ট স্কিল রপ্ত করা। অতঃপর নিয়মিত সেই স্কিল চর্চার মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে।
প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নতির ফলে সবকিছু সহজলভ্য হলেও প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে টিকে থাকতে মানোন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।