গণতান্ত্রিক সরকার হলেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে : মির্জা ফখরুল
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/03/06/fakhrul-photo.jpg)
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা তখনই সম্ভব হবে, যখন একটা গণতান্ত্রিক সরকার হবে। মানুষের নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে তখনই, যখন একটা গণতান্ত্রিক সরকার আসবে। আর, সে সরকার হবে জনগণের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ রোববার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির একটাই কারণ, সেটা হচ্ছে—আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি। সেইসঙ্গে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের অদক্ষতা।’
পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হবে। এটাই হবে একাত্তর সালের চেতনাকে বাস্তবায়ন করা।’
এ ছাড়া ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এ দেশে যা কিছু হয়েছে কল্যাণকর, সবকিছু ছাত্রদের হাত ধরে এসেছে। আবার জেগে উঠতে হবে। এ ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আসুন আমরা সে লক্ষ্যে এগিয়ে চলি।’
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘দেশকে আওয়ামী লীগ সরকার এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখানে মানুষ বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে খাবারটা দরকার, সে খাবারটা সে পাচ্ছে না। তার বেঁচে থাকার জন্য যে নিরাপত্তা দরকার, সে নিরাপত্তাটুকু সে পাচ্ছে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দুর্ভাগ্য আমাদের, যারা এ দেশ স্বাধীন করেছিলাম। একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র তৈরি করার জন্য আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম—এখানে সব মানুষ মোটা কাপড় পরবে, মোটা ভাত খেয়ে বেঁচে থাকবে, শান্তিতে থাকবে, নিরাপদে থাকবে। আওয়ামী লীগ সরকার যত বার ক্ষমতায় এসেছে, তারা মানুষের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।’
১৯৭৫ সালের বাকশালের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সে একই ঘটনা ঘটছে। স্বৈরশাসকেরা অনেক সময় ভালোভাবে দেশ চালায়, আইয়ুব সরকারও চালিয়েছিল। কিন্তু, এ সরকার দেশটাও চালাতে পারে না। মানুষকে খাবার দিতে পারে না। মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না। কর্মসংস্থান নেই, তাই বেকার ছেলেদের চাকরি দিতে পারে না।’
এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে আটক করে রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, কথা বললেই ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা যখন দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সারা দেশে আন্দোলন শুরু করেছি, তখন তাদের টনক নড়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এ ভয়াবহ সরকার, যারা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, তারা টিকে আছে। তাদের হটাতে হবে। গভীর চক্রান্ত রয়েছে, সে চক্রান্ত হচ্ছে এ দেশের মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে, তারা একটা রাজতন্ত্র চালাবে।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম একটা মুক্ত সমাজের জন্য। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য। আমাদের সে মুক্তসমাজ গড়ে তুলতে হলে, আবার সেই ৭১ সালের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে, প্রয়োজনে আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের মতো এ দেশকে রক্ষা করতে হবে। জনগণকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের এ যুদ্ধ শুধু বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়, এ যুদ্ধ আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য।’
ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের সঞ্চালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।