পোড়া স্তূপে ভালো কাপড়ের খোঁজে
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/09/15/porraa-stuupe-kaaprr.jpg)
রাজিয়া খাতুন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পুড়ে যাওয়া কৃষি মার্কেট থেকে দুই ব্যাগ কাপড় নিয়ে বের হচ্ছিলেন। জানতে চাইলে বললেন, ‘পুড়ে যাওয়া কাপড়ের দোকান থেকে দেইখা দেইখা বের করছি। এগুলো টুকটাক ভালো রয়েছে। এখন মার্কেটের ভেতর থেকে বের করে দিয়েছে। তাই চলে যাচ্ছি।’ আজ শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ২টার দিকে কৃষি মার্কেটের ভেতরে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
শুধু রাজিয়া খাতুন নয়। এমন আরও অনেকেই পোড়া কাপড়ের মধ্যে থেকে ভালো থাকা কাপড় খুঁজে নিয়ে চলে গেছে। পুড়ে যাওয়া কাপড়ের দোকানগুলোর সামনে হঠাৎ ভিড় লেগে যায় জুমার নামাজের সময়। অনেক নারী-পুরুষ একসঙ্গে ভালো কাপড় খোঁজার চেষ্টা করছিলেন।
একজন বিহারি নারী, নাম রাহিমা খাতুন। হাতে করে একটি শাড়ি ও দুটি জামা নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘একটি শাড়ি আর, দুটি জামা খুঁজে পেয়েছি। এখন চলে যাচ্ছি। বের করে দিয়েছে।’
দুপুর ২টার পর থেকে তাদের সরে যেতে বলেন দোকানের কর্মচারীরা। কিন্তু, কেউ কথা শুনছিলেন না। পরে সোয়া দুটার দিকে কৃষি মার্কেট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মাইকিং করে তাদের সরে যেতে বলা হয়। এরপর কিছু লোক গিয়ে কাপড় খুঁজতে থাকা ব্যক্তিদের জোর করে বের করে দেয়।
পুড়ে যাওয়া রাসেল বস্ত্র বিতানের কর্মচারী আব্দুল মালিক বলেন, ‘আগুন লাগার পর থেকে সহযোগিতার নামেও অনেকে মালামাল লুট করেছে। আর আজকে সকাল থেকে অনেকেই এখানে এসেছেন, যদি কিছু পাওয়া যায়; এমন মানসিকতা নিয়ে।’
এর মধ্যে একটি ব্যতিক্রম দৃশ্য দেখা যায় পুড়ে যাওয়া ‘লতা শু’ নামের একটি জুতার দোকানে। দোকানের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম পুড়ে যাওয়া জুতার মধ্যে ভালো থাকা জুতা বিক্রি করছিলেন কম দামে। সেই জুতা অনেকেই কিনছিলেন।
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১৮০০ টাকার জুতা ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছি। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত টাকা দরে কিছু জুতা বিক্রি করছি। সকাল থেকে বেশ কয়েক জোড়া জুতা বিক্রি করে দিয়েছি।’
জুতা কেনার পর শাহিদা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘মেয়ের জন্য দুই জোড়া জুতা কিনেছি ২০০ টাকা দিয়ে। কম দামে পেলাম। ভালো জুতা মনে হয়েছে।’
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা ৪৩ মিনিটে আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও কয়েকশ দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। পুড়ে ছাই হয়েছে এসব দোকানের মালামাল। সব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। কৃষি মার্কেট মালিক সমিতির দাবি, অগ্নিকাণ্ডে ২০৫টি স্থায়ী ও ১২০টি ছোট দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব দোকানে কাজ করে দুই হাজারের বেশি মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন। এ মার্কেটে সবজির দোকানের পাশাপাশি জুতার দোকান, স্বর্ণের দোকানসহ অনেক ধরনের দোকান ছিল।