সুন্দরবনে আগুন : ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
সুন্দরবনে পরিকল্পিতভাবে ও অসৎ উদ্দেশে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বনজ সম্পদের ক্ষতিসাধনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ছয়জনের নামোল্লেখ করে আদালতে মামলা করেছে বনবিভাগ।
আজ রোববার সকালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বাদী হয়ে বন আইনে মামলাটি করেন। তবে মামলায় কাদের আসামি করা হয়েছে এ সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি বনবিভাগ বা থানা পুলিশ।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, গত ১৩ এপ্রিল সুন্দরবনের নাংলী ক্যাম্প এলাকায় আগুন লাগার ঘটনা পরিকল্পিত, ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণ পেয়েছে বন বিভাগ। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার্থে বনে আগুন দেওয়া হয় এমন তথ্য-প্রমাণ থাকায় বনবিভাগ থেকে এ মামলা করা হয়।
ডিএফও আরো জানান, এর আগে সুন্দরবনে বহুবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও কখনো মামলা বা সুনির্দিষ্টভাবে কেউকে অভিযুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এবার বনবিভাগ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা করেছে। মামলার সব আসামি বন সংলগ্ন লোকালয়ের বাসিন্দা। তবে তাদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে এই মুহূর্তে নাম প্রকাশ না করা হচ্ছে না।
বন বিভাগ জানায়, গত মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাতে নাংলী ক্যাম্পসংলগ্ন বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বনবিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ইউনিট স্থানীয়দের সহায়তায় বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে সুন্দরবনের আট দশমিক ৫৫ একর বনাঞ্চল সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। আরো ৬৬ একর বনাঞ্চলসহ জীববৈচিত্র্যের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির জিপিএস ডিভাইসের মাধ্যমে সুন্দরবন বিভাগ পুড়ে যাওয়া বনাঞ্চলের এই হিসাব বের করেছে।
এ ঘটনার মাত্র ১৭ দিন আগে নাংলী ক্যাম্প এলাকায় আরেকটি আগুনের ঘটনায় পুড়ে যায় প্রায় দেড় একর বনভূমি। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার্থেই পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবনে আগুন দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানায়, কয়েকটি অসাধু মৎস্য শিকারিচক্র প্রতিবছর বনে আগুন লাগিয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে তারা আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে মাছের বিল তৈরি করে। বর্ষা এলেই শুরু হয় ওই চক্রের মাছ ধরার উৎসব। বন কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই চক্রের কাছে এসব বিল মৌসুমভিত্তিক অলিখিত ইজারা (লিজ) দেয়। সেখানে বিভিন্ন ধরনের জাল পেতে মাছ শিকার করা হয়। প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকা আয় হলেও সরকারের ঘরে একটি টাকাও আসে না।
নাংলী ক্যাম্পসংলগ্ন আবদুল্লার ছিলার বনে আগুনের ঘটনাটি তারই অংশ বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।