ধানমণ্ডিতে শেখ মুজিবের বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ, রডও খুলে নিচ্ছে জনতা
রাজধানীর ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙচুর করে ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এখন ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে লোহার রডগুলো খুলে নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ বাড়ির পেছনে থাকা তিনটি পুড়ে যাওয়া মাইক্রোবাস থেকে রডও খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে এ দৃশ্য দেখা যায়। সরেজমিন দেখা গেছে, এসকেভেটর দিয়ে দুটি ভবনের অনেক অংশ ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ভাঙা অংশের কনক্রিটে থাকা লোহার রড খুলে নিয়ে যাচ্ছেন লোকজন। ওই রড বের করার জন্য ইট-সিমেন্টের খণ্ডাংশও ভেঙে ফেলছেন কেউ কেউ।
সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি রড খুলছিলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন রড খুলছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এগুলো খুলে নিয়ে বিক্রি করে দেব বলে এসেছি।’
সিরাজুলের পাশে থাকা আরেকজন লোহা খুলছিলেন। তিনি জানালেন, এই লোহাগুলো তিনি তার বাসায় সংরক্ষণ করবেন। সেজন্য তিনি মাত্র দুটি রডের অংশ খুলেছেন।
ধানমণ্ডি-৩২ এ বাড়ির সীমানা প্রাচীরে লোহার কাঁটাযুক্ত গোল খাঁচা দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া ছিল। কয়েকজনকে দেখা গেল সেই রড খুলে নিচ্ছে। এদের মধ্যে একজন নাজমুল হাসান। জানতে চাওয়া হলে খুলতে খুলতে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এগুলো জনগণের সম্পদ। জনগণের টাকা দিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়েছে। এখন খুলে নিয়ে যাচ্ছি। পরে কী করব, তা পরে দেখা যাবে।’
নাজমুলের পাশ থেকে একজন মজা করে বলেন, ‘লোহা দিয়ে ঝালমুড়ি খাব!’
একই ধরনের দৃশ্য ভেঙে ফেলা পুরো বাড়িতেই চলছে। এবার চোখ আটকে গেল ভেতরে থাকা তিনটি পুড়ে যাওয়া গাড়িতে। এই তিনটি গাড়িতে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আগুন দেওয়া হয়েছিল, তখন অবশ্য পুরো বাড়িতেই অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। পুড়ে যাওয়া তিনটি গাড়িতে অবশিষ্ট থাকা লোহা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং লোহা খোলার যন্ত্র দিয়ে খুলে নেওয়া হচ্ছে। তিনটি গাড়িতে অন্তত ১০ জন এসব লোহা খুলতে দেখা যায়।
তাদের একজনের নাম শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চারজন মিলে লোহা খুলেছি অনেক। ভ্যান আসতে বলেছি। এলে লোহাগুলো নিয়ে চলে যাব।’
ওই সময় শফিকুলের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এগুলো নিলে কোনো সমস্যা হবে না? তখন তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে দেখছি যার যেটা মন চাচ্ছে, নিয়ে যাচ্ছে। আমি নিলে সমস্যা কী? আর এগুলো সব জনগণের সম্পদ আর আমরা জনগণ।’
পাশে থাকা আরেকটা পোড়া গাড়ির লোহা খুলছিলেন ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, ‘লোহাগুলো বাসায় নিয়ে স্মৃতি হিসেবে রেখে দেব। আর যদি বেশি খুলতে পারি, তাহলে কিছু বিক্রি করে দেব।’