সব বিশৃঙ্খলা দূর করতে দ্রুত নির্বাচন প্রয়োজন : মেজর (অব.) হাফিজ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/06/mejr_haaphij.jpg)
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারকে আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি, যত রকমের বিশৃঙ্খলা, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা যত ধরনের অনুসঙ্গ-আভাস পাচ্ছি তা দূর করতে অবিলম্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন।’
আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে স্বাধীনতা ফোরাম কর্তৃক ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মেজর (অব.) হাফিজ।
শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িসহ সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় হামলার বিষয়ে বিএনপিনেতা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে, সেটি এখনও চলমান। সেটি এখনও শেষ হয়নি। এটি কারা করেছেন, এই তথ্য আমাদের কাছে নেই। এতে সরকারের কী ভূমিকা ছিল, সে তথ্যও আমাদের কাছে নেই। সুতরাং, আর অল্প কিছু সময় আমরা অপেক্ষা করব। আজকের দিনের মধ্যেই আশা করি সবকিছু পরিষ্কার হবে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, কারা এজন্য দায়ী, তখন সব পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেলে আমরা এ সম্পর্কে বিএনপির পক্ষ থেকে মনোভাব মিডিয়ার সামনে জনগণের সামনে প্রকাশ করব। অপূর্ণ তথ্য নিয়ে মন্তব্য করার সুযোগ নেই।’
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘আমরা আশা করি, এগুলো গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য হয়তো। আগামীদিনের গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এজন্য কেউ কেউ হয়তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারেন। বিশেষ করে এর মধ্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কোনো হস্তক্ষেপ আছে কি না, সেটিও আমরা জানার চেষ্টা করব।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কুখ্যাত ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ বিএনপি ও ছাত্রদের আন্দোলনকে দমন করার জন্য পেশী শক্তির বারংবার ব্যবহার করেছেন। আমাদের স্মরণ শক্তি অনেক কম, অনেকে ভুলে গেছেন। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায়, টঙ্গীর পাশেই কীভাবে ১৫ জন সাধারণ মানুষ হত্যা করে ভ্যানে রেখে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কল্পনা করা যায়? তারা আপনার আমার ভাই, সন্তান। রাজপথে ন্যায্য দাবি করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সাহায্যে জ্বালিয়ে দেওয়া আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা এর অবসান চাই। অবসান হতে পারে একমাত্র গণতন্ত্রের মাধ্যমে।’
বিশৃঙ্খলা দূর করতে নির্বাচন প্রয়োজন মন্তব্য করে বিএনপিনেতা মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘ছাত্ররা যদি কোনো নতুন রাজনৈতিক দল বানায়, আমরা তাকে স্বাগতম জানাই। জনগণের কাছে আরও একটি চয়েজ বাড়ল। যেদিনই নির্বাচন হবে নিশ্চয়ই সব রাজনৈতিক দল সেখানে অংশগ্রহণ করবে। ছাত্রদের এই রাজনৈতিক দল যথেষ্ট সময় পেয়েছে, তারা আরও সময় চায়। তবে আমরা অবশ্যই মনে করি, এই বছরই পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। বর্তমান সরকারকে আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি, যত রকমের বিশৃঙ্খলা, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা যত ধরনের অনুষঙ্গ, গণতন্ত্রের বিরোধীদের আভাস আমরা পাচ্ছি, এগুলো দূর করতে হলে অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা প্রয়োজন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আজকে নানা ধরনের সংস্কারকে পূর্ব শর্ত দেওয়া হচ্ছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়। সংবিধান সংস্কারের কথা বলেছেন, একটি গ্রুপ বলেছেন, ৭২ এর সংবিধানকে ছুড়ে ফেলা হবে। তারা ছুড়ে ফেলার কে? অনেক রক্তের বিনিময়ে জিয়াউর রহমান এবং ছাত্র-জনতার মিলিত সংগ্রামের ফলে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। ৭২ এর সংবিধান একটি চমৎকার সংবিধান। এটি আওয়ামী লীগের সংবিধান নয়, এটি জনতার সংবিধান। আওয়ামী লীগ কাটাছেঁড়া করে এর অঙ্গহানি ঘটিয়েছে। প্রয়োজন হলে সংবিধানে আরও সংযোজন করা যায়। কিন্তু যাই হোক, নতুন করে সংবিধান লেখা হোক বা সংশোধন করা হোক, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ।’
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘কোনো বুদ্ধিজীবী, কারও কোনো গুরু বা কোনো সৌখিন রাজনীতিবিদ বা বিদেশ থেকে আগত কোনো বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে বাংলাদেশের সংবিধান নতুন করে লেখা বা সংশোধন করা যাবে না। সংবিধান সংযোজন বা সংশোধন একমাত্র অধিকার রাখে স্বাধীন পার্লামেন্ট। নিরপেক্ষভাবে একটি পার্লামেন্ট। যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, আমরা এখনো তা পুরোপুরি দেখিনি, আমরা এই সংস্কারের প্রস্তাবগুলো নিয়ে বিএনপি সর্বোচ্চ পর্যায়ে মনোভাব জানাবে।’
স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ও জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামানসহ অন্যান্যরা।