সংকট আরো কঠিন, আরো ভয়াবহ : ফখরুল
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনের তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এখন সংকট আরো কঠিন, আরো ভয়াবহ। আন্দোলনের মাধ্যমেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি আদায় করতে হবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী নগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
জনসভায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, সময় খুব সংকীর্ণ, সংকট আরো কঠিন, আরো ভয়াবহ। আজকে প্রশ্ন বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না। প্রশ্ন বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি পারবে না। আমাদের কথা বলার অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে কি থাকবে না, সংগঠন করার অধিকার থাকবে কি থাকবে না, এসব এখন মৌলিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভা শুরু হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহীর এই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি সমাবেশে যোগ দিতে পারেননি। তবে মুঠোফোনে তিনি সমাবেশে যোগদানকারী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আমরা সংলাপে গিয়ে নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবি করেছিলাম, কিন্তু আমাদের কথা না শুনে তফসিল দিয়েছে। তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণার ফলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে না। সমাবেশে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরবর্তী কর্মসূচিতে অবশ্যই তিনি রাজশাহী আসবেন।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আপনারা সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন। পথে পথে বাধা অতিক্রম করে আপনারা গণতন্ত্রের জন্য এসেছেন। এখন সংকট আরো কঠিন, আরো ভয়াবহ। আজকে প্রশ্ন, গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না। আমাদের কথা বলার অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে কি না, তা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, খালেদা জিয়াকে এই স্বৈরাচার সরকার আটকে রেখেছে। তিনি অসুস্থ, হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল, সেখান থেকে তাঁকে জেলখানায় নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। তারা পুলিশ দিয়ে, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে মানুষকে গণতন্ত্রের অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ঐক্য করেছি। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে মিটিংয়ে বলেছিলেন, আমি হিংসা চাই না, শান্তি চাই। আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করবেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করবেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সংলাপে দাবি দিয়ে এসেছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু তারা তা করেনি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা জানি আপনারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যেই আপনাদের এই ত্যাগ। মামলা হামলায় আপনারা জর্জরিত। এখানে একজনও নেই যার বিরুদ্ধে মামলা নেই।
মির্জা ফখরুল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করে বলেন, তাহলেই আমরা নির্বাচনে যাব, নইলে নির্বাচনে যাব না। দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাঁকে নির্বাচনের মাঠে কাজ করতে দিতে হবে। অন্যথায় কোনো তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। রাজশাহী থেকে অনেকে রক্ত দিয়ে বিদায় নিয়েছে। তাদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।
মির্জা ফখরুল তাঁর বক্তব্যে বলেন, জানতে চাই আপনারা কি দেশনেত্রীর মুক্তি চান? তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে চান, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা চান? তাহলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
খালেদা জিয়াকে ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন হতে দেবে না
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। চিকিৎসা ছাড়াই জোর করে তাঁকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁর কি দোষ ছিল? তিনি দেশের জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছিলেন। সেজন্য এই সরকার তাঁকে কারাগারে রেখেছে। কারণ এই সরকার জনগণকে ভয় পায়। তারা ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচন করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতিকে কিভাবে ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। সেই প্রধান বিচারপতি লিখেছেন যে দেশের প্রধান বিচারপতি ন্যায়বিচার পান না, সে দেশের জনগণ কিভাবে ন্যায়বিচার পাবে?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন খালেদা জিয়া বয়কট করার কারণে নির্বাচন হয়নি। এবারও খালেদা জিয়াকে ছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন হতে দেবে না।
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, সাত দফার আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা বাধা দিয়েছেন। কিন্তু রাখতে পারেন না। জনগণের জোয়ার বাধা দিয়ে রাখা যায় না। প্রশাসনকে বলতে চাই, আওয়ামী লীগের সময় শেষ। জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান। যদি না দাঁড়ান তাহলে জনগণ একদিন আপনাদের কাছে তার কৈফিয়ত দাবি করবে।
বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেওয়া হবে না
এবার বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, এবার ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এবারের জনজোয়ারে আগামী নির্বাচনে নৌকা ভেসে যাবে।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেওয়া কথা রাখেননি। কথা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি তাঁর কথা বরখেলাপ করেছেন।
সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, সিইসি সরকারের তল্পিবাহক ও অকার্যকর। বর্তমান সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। বেগম জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন চলবে। নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান তিনি।
উসকানি দেবেন না
জনসভায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করে দিয়েছে, আমরা যাতে নির্বাচনে না যেতে পারি। দেশের ৯০ ভাগ ভোটারকে বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্টকে বাদ দিয়ে, সাত দফা না মেনে নির্বাচন বাংলাদেশে হতে পারে না।’ রব বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, আমাদের উসকানি দেবেন না। ৭ দফা না মানলে দেশে নির্বাচন হবে না।’
তফসিল ও নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি
তফসিল ও নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে এখনো বলব, তফসিল পিছিয়ে দেন। তফসিল বদলান। আমরা আন্দোলন করছিলাম, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে। আর আপনারা এমন একটা ফাঁদ পেতেছেন, যাতে আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি। ওই ফাঁদ, ওই বেড়াজাল, ওই অত্যাচার ছিন্ন ভিন্ন করে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এক মাঘে শীত যায় না। এটি ভুলে গেলে চলবে না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যদি এক শীত কারাগারে কাটাতে হয়, শেখ হাসিনাকে ১০ শীত কাটাতে হবে।
মান্না বলেন, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে, একতরফা নির্বাচনী বৈতরণী পার করা সম্ভব নয়। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বানচাল করতে চায় না। ৭ দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
প্রতিহিংসা বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সরকার সে ফাঁদ পেতেছে। আমরা আবারো নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান জানাই তফসিল পেছানোর। আমাদের দাবি না মানলে কোনো নির্বাচন নয়।
রাজশাহীর জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে মান্না বলেন, ঢাকায় আসেন, দেখি ওরা আমাদের কথা শুনে কিনা। আমরা আলোচনা করে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু এরই মাঝে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে।
বঙ্গবন্ধু আর জিয়াউর রহমানের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ছাড়ব
জনসভায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আমি যতদিন বেঁচে থাকব বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধরে বেঁচে থাকব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর জিয়াউর রহমানের এই যে দ্বন্দ্ব, এই দ্বন্দ্ব করে যারা দেশকে লুটেপুটে খাচ্ছে, আল্লাহ যদি আমাকে সময় দেয় তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আর জিয়াউর রহমানের দ্বন্দ্ব আমি মিটিয়ে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।
জনসভায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়া ২০১৫ সালে লাগাতার হরতাল-অবরোধ দিয়েছিলেন। আমি উনাকে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাখান করতে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি হরতাল প্রত্যাখ্যান করতে পারেন নাই। জনগণই অবরোধ ভেঙেছে।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, এর আগে শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম আলোচনায় বসুন, বসেননি। এবার আলোচনায় বসেছেন।
সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, শেখ হাসিনা যেদিন আলোচনায় বসেছেন সেদিনই আপনাদের বিজয় হয়েছে। আপনারা কি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় চান। বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া, তাঁকে বন্দি রাখা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বিএনপি রাজাকারের গাড়িতে পতাকা দেয়নি। শেখ হাসিনা রাজাকারের গাড়িতে প্রথম পতাকা দিয়েছেন।
জনসভায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, আপনাদের দুঃসময়ে এই সমাবেশে যতো মেয়ে এসেছে, এর অর্ধেক মেয়ে আমার দলে থাকলে, আমি শেখ হাসিনাকে সরকার থেকে তিন দিনের মধ্যে ফেলে দিতে পারি।
বঙ্গবীর বলেন, টাঙ্গাইল থেকে সড়কপথে এসেছি, রাস্তায় রাস্তায় বাধা এসেছে। আমাকে ফেরাতে পারেনি। এই মাঠের মানুষদেরও পারেনি। হাসিনা কথা দিয়েছিলেন, জনসভায় বাধা দেবেন না। কিন্তু আমার গাড়ি পাঁচবার ধরেছে। তারপর আমাকে ভুল রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। আমি সমাবেশের রাস্তা খুঁজে বের করেছি।
পালানোর পথ খুঁজছে সরকার
সরকার পালানোর পথ খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এই সরকারের ভিত হলো পুলিশ, ঘুষ, অনাচার ও দুর্নীতি, গায়েবি মামলা আর গ্রেপ্তার। কিন্তু তাদের ভিত নড়ে গেছে। তারা এখন পালানোর পথ খুঁজছে।
জনসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে বাস বন্ধ, যোগাযোগ বন্ধ, তারপরও আপনারা হেঁটে এসেছেন। আমরা-আপনারা আন্দোলনে আছেন, আপনারা মাঠে থাকেন। আপনাদের বিজয় সুনিশ্চিত।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, এবার আপনারা জয়ী হবেন, জয়ী হলে কী হবে? কৃষক শ্রমিকদের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। কৃষকের পণ্যের মূল্য নেই, শ্রমিকের শ্রমের মূল্য নেই। এসব প্রতিষ্ঠিত হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘এখানে আজ যারা এসেছেন সবাইকে কি গ্রেপ্তার করা সম্ভব? সম্ভব নয়। তাহলে আপনারা মাঠে থাকেন। আপনাদের বিজয় নিশ্চিত। সরকার যত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক না কেন, ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে হবে। জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত।’
অন্যরা কী বললেন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। সাত দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কেউ নির্বাচনে যাওয়ার কথা চিন্তা করবেন না।’
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিভিন্ন চিন্তা-ধারার মানুষ কেন এক মঞ্চে। দেশের ঘটনা কি, আজকে গণতন্ত্র নিখোঁজ। আপনারা কি বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? আজকে আপসহীন নেত্রী কারাগারে। তাঁকে কারাগারে রেখে আপনারা নির্বাচনে যাবেন? ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় প্রধানমন্ত্রী বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। সাত দফা না মানলে আপনারা নির্বাচনে যাবেন?
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘হুদার অধীনে নির্বাচনে গেলে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে, শেখ হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। আর খালেদা জিয়া আমৃত্যু কারাগারে এবং তারেক জিয়া আজীবন নির্বাসনে থাকবেন। আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি, এ দেশের মানুষ আমাকে, আপনাকে ছাড়বে না। তাই বলছি, হুদাকে নামান, শেখ হাসিনাকে নামান। আমরা নির্বাচনে গেলে জয়ী হব যদি ভোট দিতে পারি।’
জনসভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু বলেন, দেশকে একটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে না চাইলে ৭ দফা মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। আমরা যে দাবিগুলো দিয়েছি, সেগুলো মেনে নিন। আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি। সেগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
জনসভায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিচার চাই, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনা বাইরে থাকতে পারেন না। শেখ হাসিনাকেও জেলে যেতে হবে।’
ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে অলি আহমদ
২০ দলীয় জোটভুক্ত লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আজ রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় অংশ নিয়েছেন। এই প্রথম তিনি ঐক্যফ্রন্টের কোনো কার্যক্রমে যোগ দিলেন। এই সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে সমাবেশে অলি আহমদ বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে রাজপথে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
এর আগে সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জনসভা করে। এর কোনোটিতেই অলি আহমদ নিজে উপস্থিত ছিলেন না। সিলেটে তাঁর দলের পক্ষ থেকে ঐক্যফ্রন্টের প্রতি সমর্থন জানানো হয়। এ ছাড়া ঢাকার জনসভায়ও তাঁর দলের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাজশাহীর সমন্বয়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, উপদেষ্টা এসএম আকরাম, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, মো. শাহজাহান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, শহীদুল্লাহ কায়সার, আবদুল গোফরান, শাহজাহান মিয়া, আবদুর রউফ ইউছুপ, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, হারুনুর রশিদ, নাদিম মাহমুদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাহ আহমদ বাদল, মোস্তাক আহমেদ, এ টি এম গোলাম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, রফিকুল ইসলাম, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন বিএনপির রাজশাহী বিভঅগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।