সীমান্ত এলাকায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি।’ এই গানের আবেগঘন সুরে আজ শুক্রবার সকাল থেকেই দুই বাংলার কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, রাজনীতিবিদ ও সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষের সমারোহে মুখর হয়ে উঠে ভারত-বাংলাদেশের পেট্রাপোল ও বেনাপোল সীমান্ত।
অমর একুশের সুরে দুই দেশের মঞ্চ থেকে ভেসে আসা ‘একই আকাশ, একই বাতাস, এক হৃদয়ে একই তো শ্বাস’ গানের সুর যেন বেঁধে রাখে সবাইকে। ২০০২ সালে ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দুই বাংলার তথা ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে ‘গঙ্গা-পদ্মা ভাষা ও মৈত্রী সমিতির’ উদ্যোগে সীমান্তবর্তী প্রায় ২৫টি সংগঠন আজ সীমান্তের পেট্রাপোল ও বেনাপোলের এই মিলন মেলার সূচনা করে।
বাংলাদেশের বেনাপোল পৌরসভা আর ভারতের বনগাঁ পৌরসভার বেনাপোলের শূন্যরেখা থেকে মাত্র ২০০ মিটারের দূরত্বে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একুশে মঞ্চ’। ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পীরা এই দুই মঞ্চে বসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। দুই বাংলার মানুষ সীমান্তে মিলিত হয় আলিঙ্গনে। মেতে ওঠে আড্ডায় ও স্মৃতিচারণে। এদিনের জন্য সকালে আয়োজকরা আগে থেকেই নিজ নিজ ভূখণ্ডে অপেক্ষায় থাকেন।
ঘড়িতে যখন সকাল ৯টা, তখন সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে পা রাখেন পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকসহ পশ্চিমবাংলার কবি, শিল্পী, সাংবাদিক ও সাহিত্যিকদের একটি প্রতিনিধিদল। তাঁদের অভ্যর্থনা জানান যশোরের শার্শা আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনসহ অন্যরা।
এবারও ভারতের বেনাপোল সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান। তবে মানুষের চাপ সামলানো ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এবার আলাদা মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় দুই বাংলার অনুষ্ঠান। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পেট্রাপোল বেনাপোল চেকপোস্ট পেরিয়ে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন পশ্চিমবাংলার খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
অন্যদিকে, অমর একুশে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের শূন্যরেখায়। প্রতি বছর এই দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা পৃথিবীতে পালিত হয়ে আসছে।
গত পাঁচ বছর ধরে উজ্জীবন সোসাইটি, তিওড়, হিলি, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ ভারত এবং ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড’ ও ‘সাপ্তাহিক আলোকিত সীমান্ত’ হাকিমপুর, দিনাজপুর বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদদের স্মরণে হিলি আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট পেরিয়ে নো-ম্যানস ল্যান্ডে অমর একুশে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করছে।
ভারতের উজ্জীবন সোসাইটি এবং বাংলাদেশের হিলির মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও আলোকিত সীমান্তের যৌথ উদ্যোগে আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় হিলি সীমান্তের শূন্যরেখায় ভারত ও বাংলাদেশের নেতারা যৌথভাবে অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়।
এতে ভারতের কবি সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল যোগদান করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনে তাই শিকড়ের টানে ভোর থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রান্তিক শহর হিলি সীমান্ত মুখরিত হয়ে উঠে নানা অনুষ্ঠানে।