করোনাভাইরাস : ভারতের সামনে ভয়াল দিন

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের বস্তিতে যে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাঁর বিদেশ ভ্রমণের রেকর্ড নেই। হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করে করোনা ধরা পড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি মারা যান।
করোনাভাইরাসে ভারতজুড়ে প্রায় তিন হাজার আক্রান্ত এবং এ পর্যন্ত ৭৭ জনের মৃত্যু হলেও মুম্বাইয়ের প্রায় ১০ জনবসতির ধারাবি বস্তিতে ওই ব্যক্তির মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসেছে দেশটির চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, নিউইয়র্কের চেয়ে ত্রিশগুণ ঘনবসতি এই ধারাবি বস্তি। এক বর্গকিলোমিটারে সেখানে দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষ থাকে। গত বৃহস্পতিবারও সেখানে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এর আগে মঙ্গলবার মুম্বাইয়ে মালবানি বস্তিতে করোনায় আক্রান্ত ৬৩ বছর বয়সী আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, ভারতের এসব বস্তির মাধ্যমে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বস্তি থেকে অন্যত্রও ছড়াতে পারে। দেশটিতে বড় বড় আরো বস্তি রয়েছে। সেসব জায়গাও ছড়াতে পারে।
বস্তিগুলোতে মানুষজন এতটাই গাদাগাদি করে থাকে যে সেখানে আসলে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা একেবারে অসম্ভব। অর্থনৈতিক কারণে সেটা আরো সম্ভব নয়।
নয়াদিল্লির নিকটবর্তী গুরুগ্রামের মেদান্তা-দ্য মেডিসিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নরেশ ত্রেহান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমাদের কর্তৃপক্ষের জানাই আছে, এসব বস্তি করোনা ছড়ানোর মোক্ষম জায়গা হয়ে উঠতে পারে।’
ডা. ত্রেহান বলেন, ‘যখন জানা যাবে, একটি বস্তিতে আক্রান্ত হয়েছে তখনই সেখানে লকডাউন করতে হবে। পরবর্তী দুই সপ্তাহ খাবার-দাবার দিয়ে সবাইকে আলাদা করে রাখতে হবে। তবেই জানা যাবে কার কী হয়েছে। কে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত আর কে কম আক্রান্ত। বাকি সবাইকে পর্যবেক্ষণে রেখে তাদের চিকিৎসা চালাতে হবে।’
ভারতের চিকিৎসকরা সিএনএনকে বলেছেন, ভারতকে বড় ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
ডা. ত্রেহান বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রমাণ পেয়েছি। কিন্তু আমরা জানি না ঠিক কীভাবে বা কী পরিমাণে তা হচ্ছে।’
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষিত চলমান ২১ দিনের লকডাউন সবাইকে মেনে চলতে হবে বলেও জানান চিকিৎসকরা।
এদিকে করোনাভাইরাসে ভারতজুড়ে দুই ৯০৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর এর মধ্যে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার পর ২১১ জন সুস্থ হয়েছেন। নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক বার্তা সংস্থা বিএনওনিউজ এসব তথ্য দিয়েছে।