দুই মাসে ভারতের তিরুপতি মন্দিরের ৭৪৩ কর্মী করোনায় আক্রান্ত

গত দুই মাসে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের চিত্তরে অবস্থিত বিখ্যাত তিরুমালা-তিরুপতি দেবস্থানমের (টিটিডি) প্রায় সাড়ে সাতশ কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শুধু অর্থ উপার্জনের জন্যই অবিবেচকের মতো মন্দির খুলে দেওয়া হয়েছিল বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই সরব হয়েছিলেন। সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে টিটিডির চিফ এক্সিকিউটিভ অনিলকুমার সিংহল জানিয়েছেন, তিরুপতি মন্দিরে শুধু নয়, গোটা অন্ধ্রপ্রদেশেই সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শৃঙ্খল ভাঙতে ভারতজুড়ে লকডাউন শুরু হয়েছিল ২৫ মার্চ। বন্ধ হয়েছিল তিরুপতির এই মন্দিরের দরজাও। প্রায় আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর গত ১১ জুন ফের দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয় মন্দির। তার পর থেকেই সংক্রমণ শুরু হয় মন্দিরের কর্মীদের মধ্যে। দর্শন চালুর পাশাপাশি ‘ডায়াল ইওর এক্সিকিউটিভ অফিসার’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছিল মন্দির কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট নম্বরে ডায়াল করে টিটিডির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন ভক্তরা। সেই রকম একটি কথোপকথনের সময়েই এই তথ্য উঠে এসেছে।
অনিলকুমার সিংহল জানিয়েছেন, ১১ জুন মন্দির খোলার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৭৪৩ জন কর্মীর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাঁদের মধ্যে অবশ্য ৪০২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ৩৩৮ জনের চিকিৎসা চলছে টিটিডির তিনটি রেস্টহাউস শ্রীনিবাসম, বিষ্ণুনিবাসম ও মাধবমে। এ তিনটি রেস্টহাউসকেই কোভিড সেন্টারে পরিণত করা হয়েছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে তিনজনের মৄত্যু হয়েছে।
অনিলকুমার সিংহল বলেছেন, ‘ভাইরাস সংক্রমণে তিন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের জন্য করোনা কেন্দ্রে সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতিতে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই মন্দিরে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয়। লকডাউনের পর জুন মাসে মন্দির খোলার সময়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। বাস্তবেও কার্যত তাই হয়। মন্দিরের দরজা খোলার পর থেকেই আক্রান্ত হতে থাকেন কর্মী-পুরোহিতরা।
যদিও সিইও দাবি করেছেন, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কোভিড গাইডলাইন মেনেই খোলা হয়েছিল মন্দির এবং ব্যবস্থাপনাও সেভাবেই করা হয়েছিল।
আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর আবার মন্দিরের উদ্দেশ নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব হয়েছিলেন অনেকে। এ নিয়ে অনিলকুমার সিংহলের বক্তব্য, “প্রথম দিকে (মন্দির খোলার পর) টিটিডি কর্তৃপক্ষের ভূমিকার তারিফ করেছিলেন সবাই। কিন্তু যেই কর্মী-পুরোহিতরা সংক্রমিত হতে শুরু করলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং সমাজের একশ্রেণির মানুষ আমাদের দোষারোপ করতে শুরু করলেন। শুধু টাকা রোজগারের উদ্দেশ্যেই আমরা ‘দর্শন’ চালু করেছি, এমন অভিযোগও করেছেন অনেকে। কিন্তু আমরা দর্শনার্থীদের থেকে যা আয় করছি, তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ করছি কোভিডের মোকাবিলায়।” তাঁর আরো যুক্তি, ‘শুধু টিটিডি-তে নয়, গোটা রাজ্য এবং পুরো দেশও একই সমস্যায় ভুগছে।’