এক নজরে প্রণব মুখোপাধ্যায়

ভারতের স্বাধীনতার পর যেসব বাঙালি নেতা-নেত্রী দিল্লির রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সক্রিয় রাজনীতিতে প্রণবের ভূমিকায় ইতি পড়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের রাজনৈতিক সংকটের নানা মুহূর্তে বারবারই তাঁর অনুপস্থিতির প্রসঙ্গ চলে এসেছে আলোচনায়।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১১ ডিসেম্বর ১৯৩৫ অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার কীর্ণাহার শহরের নিকটস্থ মিরাটি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম রাজলক্ষ্মী দেবী। বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী কামদাকিঙ্কর ১৯২০ সাল থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ব্রিটিশ শাসনকালে তিনি ১০ বছর কারারুদ্ধ ছিলেন। পরে কামদাকিঙ্কর অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি এবং পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদের সদস্য (১৯৫২-৬৪) হন।
সক্রিয় রাজনীতিতে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের যাত্রা শুরু ১৯৬৯ সালে। এ বছরই প্রথমবার কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিস্বরূপ রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সালেও তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে কেন্দ্রীয় শিল্পোন্নয়ন উপমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রথম ক্যাবিনেটে যোগদান করেন।
প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতীয় রাজনীতির অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী। ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয় পাত্র ছিলেন তিনি। তবে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর রাজনীতির অন্দরে টালমাটাল পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে চলে এসেছিলেন তিনি। রাজীব গান্ধী তাঁকে নিজের ক্যাবিনেটে স্থান দেননি।
তবে ১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর পি ভি নরসিমা রাওয়ের সময়কালে পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। রাজনৈতিক কর্মজীবনের পুনরুজ্জীবন ঘটে। ১৯৯৫-৯৬ সালে তিনি রাওয়ের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ সংসদ সদস্য পুরস্কারে ভূষিত হন।
প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে প্রতিরক্ষা, অর্থ, পররাষষ্ট্র, রাজস্ব, জাহাজ-চলাচল, পরিবহন, যোগাযোগ এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ গত ১০ অগাস্ট থেকে দিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তির আগের দিন রাতে বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। পরীক্ষা করাতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। হাসপাতালে নেওয়ার পর পরীক্ষায় ধরা পড়ে তিনি করোনায় আক্রান্ত। বিষয়টি তিনি নিজেই টুইট করেছিলেন।
হাসপাতালে ভর্তির দিনই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অস্ত্রোপচার করা হয়। তারপর থেকেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারি করছিলেন।
আজ সোমবার সকালেও আর্মি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা। কোমায় থাকা প্রণবকে রাখা হয়েছিল ভেন্টিলেশন সাপোর্টে।
উল্লেখ্য, প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, খবর আনন্দবাজারের।