সেই বিচারকের ফৌজদারি ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার আদেশ আপিল বিভাগের
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/05/24/high-court.jpg)
সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার পরেও ধর্ষণ মামলায় এক আসামিকে জামিন দেওয়ার ঘটনায় আপিল বিভাগে হাজির হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার। আপিল বিভাগ তার ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে সকালে আপিল বিভাগে উপস্থিত হন বিচারক কামরুন্নাহার। এ সময় কোনো আইনজীবী ও সাংবাদিককে বিচার কক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে তাঁকে তলবের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। শুনানিকালে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আদালতের আদেশের বিষয়ে বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র স্পেশাল অফিসার সাইফুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে বর্তমানে সংযুক্ত এবং ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর সাবেক বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারকে আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ১ নম্বর ক্রমিকের মামলায় শুনানি শেষে তার ফৌজদারী বিচারিক ক্ষমতা সিজ করা হয়েছে—মর্মে আদেশ প্রদান করেন। পূর্ণাঙ্গ রায় পরবর্তীতে প্রকাশ হবে।’
রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলায় গত ১৪ নভেম্বর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
২০২০ সালের ১২ মার্চ একটি মামলার ব্যাখ্যা দিতে কামরুন্নাহারকে আজ আদালতে তলব করা হয়। তাঁকে ওই বছরের ২ এপ্রিল আপিল বিভাগে হাজির হয়ে আসামিকে জামিন দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। যে মামলায় জামিন নিয়ে কামরুন্নাহারকে তলব করা হয়, সেই ফৌজদারি আবেদনটি হচ্ছে- ‘রাষ্ট্র বনাম আসলাম সিকদার’।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন আদালতের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। জরুরি কিছু বিষয়ে শুধু ভার্চুয়ালি শুনানি হয়েছে। এ কারণে বিচারক কামরুন্নাহার আপিল বিভাগে হাজির হতে পারেননি। আজ সকাল ৯টায় তিনি আপিল বিভাগে হাজির হন।
এই মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলার সাবেক অনুষ্ঠান প্রযোজক আসলাম শিকদারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মামলা করা হয়। ওইদিনই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আসলামের জামিন স্থগিত করেন। চেম্বার আদালতে জামিন স্থগিত থাকার পরও গত বছরের ২ মার্চ আসামি আসলামকে জামিন দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক কামরুন্নাহার। এরপর ১২ মার্চ কামরুন্নাহারকে তলব করেন আপিল বিভাগ।
এরপর গত বছরের ১৪ অক্টোবর বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে আসলাম শিকদার খালাস পান। তখন ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ২০ জানুয়ারি মামলার নথি তলব করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি আসলাম শিকদারকে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
কামরুন্নাহার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক হিসেবে গত ১১ নভেম্বর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন। এ রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেওয়া হয়। রায়ের বিষয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।
পরদিন সংক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এ ঘটনায় গত ১৪ নভেম্বর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের প্রস্তাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।