আপনার জিজ্ঞাসা
টেলিফোনে নিজের ইচ্ছামতো বিয়ে করা কি জায়েজ?

নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
রমজানের বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসা অনুষ্ঠানের নবম পর্বে টেলিফোনে বিয়ে করা প্রসঙ্গে ঢাকা থেকে জানতে চেয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : আজকালকার যুগে ছেলেমেয়েরা আবেগে পড়ে ফোনে বলে ফেলে, ‘চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।’ এই বিয়েটা কি সহিহ হয়, নাকি হয় না? যেমন—একটা ছেলে একটা মেয়েকে ফোনেই বলছে, চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু মেয়েটা তাতে রাজি নয়। আর যদি মেয়েটা কবুল বলেও ফেলে, এ থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় কি আছে? এ ক্ষেত্রে ছেলেটা বলছে, তার একজন সাক্ষী আছে। আর মেয়েটা বলছে, সে তো দেখেনি ছেলেটার কাছে আদৌ সাক্ষী আছে নাকি নাই।
উত্তর : তিনি যে প্রশ্নটি করেছেন, আসলে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের বিয়ের কোনো মূল্য নেই। ইসলামিক দৃষ্টিকোণে এটি বিয়ে হবে না। কোনো মুসলিম ছেলে অথবা মেয়ে যদি এ ধরনের বিয়েতে আবদ্ধ হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর বিয়ে শুদ্ধ হয়নি; বরং তিনি এ বিয়ের কারণে নিজেই অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়েছেন। এটা তো শুধু প্রবৃত্তির তাড়না। এখানে বিয়ের পবিত্রতার কোনো দায়দায়িত্ব নেই।
এ ছাড়া আমরা যদি দেখি, বিয়ের যে সামাজিক স্বীকৃতি রয়েছে, সে সামাজিক স্বীকৃতি কিন্তু এ ধরনের বিয়ের মধ্যে নেই। সে দায়িত্ববোধও নেই। এই বিয়ের মধ্যে রয়েছে শুধু আবেগ। আর এই আবেগের ওপর নির্ভর করে পরবর্তী সময়ে নিজের জীবনের জন্য অনেক কলহ-বিবাদ, অশান্তি নেমে আসে।
এ ধরনের বিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে অনেকে করে থাকেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আমরা লক্ষ করে আসছি যে তাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এমনকি তাঁদের গোটা জীবনটাই বিষাক্ত জীবনে পরিণত হয়।
ফলে এ জীবন থেকে বাঁচার জন্য কেউ কেউ আত্মহত্যার মতো কাজও করেন। সেটার বাস্তবতা আমরা দেখে আসছি। যেহেতু ইসলাম এটাকে বিয়ে বলেনি বা ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে এ ধরনের বিয়ের মূল্য নেই, তাই আমরা তাঁদের অনুরোধ করব যে এ ধরনের বিয়ে থেকে তাঁরা যেন বিরত থাকেন।
আর এমন বিয়ের তো প্রশ্নই আসে না। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মেয়ে বা ছেলে এভাবে বিয়ে করে, সাক্ষ্য থাকার পরও যদি তাঁর অভিভাবকের অনুমতি না নিয়ে থাকে, তাহলে সে বিয়ে হবে না। ধর্মীয়, সামাজিক, পারিবারিক বিবেচনায় এ ধরনের বিয়েকে অনুমোদন তো দূরে থাক, এসব বিয়েকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়াই যাবে না। প্রশ্রয় দিলেই সমাজে অরাজকতা, অশ্লীলতা ব্যাপকতা লাভ করবে।
আরেকটি বিষয় হলো, এখানে যে বলা হয়েছে টেলিফোনে বিয়ে, এটার তো কোনো অস্তিত্বই নেই। টেলিফোনে তরুণ-তরুণীদের যে আলাপ, এটা তো কোনো ভালো বিষয় নয়। এর কোনো ভিত্তিও নেই, সাক্ষী নেই, কোনো দায়দায়িত্ব নেই। এটি শুধু প্রতারণা এবং এ ধরনের প্রতারণায় যাঁরা পতিত হচ্ছেন, তাঁরা নারী নির্যাতনেরও শিকার হন। আজকাল যে নারী নির্যাতনের কথা বলা হয়ে থাকে, এটিও সেই নির্যাতনের একটি কারণ।