মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ

মুঘল আমলের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা কুষ্টিয়ার ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ। এটি ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম নিদর্শন এই শাহী মসজিদ।
অবস্থান
কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার মধ্যবর্তী স্থানে ঝাউদিয়া গ্রামে অবস্থিত। যা দেখতে প্রতিদিনই শত শত দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঝাউদিয়ার নাম অনুসারে এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। মসজিদের ভিতরে তিন কাতারে দাঁড়িয়ে ৯০-১০০ মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারেন। এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৪.২৬ মিটার, প্রস্থ ৪.৬ মিটার।
এই মসজিদ সম্পর্কে জানা জানা যায়
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় তৈরি করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এটি সম্পর্কেও প্রত্নতাত্ত্বিক কোনো নথি পাওয়া যায়নি।
অনেকের মতে, মসজিদটি মুঘল আমলে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল। উপমহাদেশ থেকে আগত ধর্মপ্রচারক শাহ্ সুফি আদারী মিয়া ঝাউদিয়ায় আস্তানা গড়েন এবং তাঁর হাত ধরেই এই মসজিদটি নির্মিত হয়।
তিনি এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের পাশাপাশি একটি স্থায়ী ইবাদতখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন, যার ফলশ্রুতিতে ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ গড়ে ওঠে।
মসজিদটির সঠিক নির্মাণকাল সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য নথি না থাকলেও জনশ্রুতি ও লোককথার ভিত্তিতে এর ইতিহাস বেশ বিস্ময়কর। মসজিদটির নির্মাণ নিয়ে একটি রহস্যময় কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।

অনেকের বিশ্বাস, এটি এক রাতেই অলৌকিকভাবে তৈরি হয়েছিল। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, “একদিন গভীর রাতে এলাকাবাসী ঘুমিয়ে পড়ার পর হঠাৎ করেই ভোরবেলা তারা বিশাল এই মসজিদটি দেখতে পান।”
মসজিদটি নির্মাণে লালচে ইট, চুনাপাথর, বালি ও চিনামাটির ব্যবহার লক্ষণীয়। এর ৫টি গম্বুজ, উচ্চ মিনার, ভেতরের কারুকাজ। এই মসজিদকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শনে পরিণত করেছে।
ঝাউদিয়া শাহী মসজিদকে ঘিরে থাকা ইতিহাস ও অলৌকিক কাহিনি একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের এক মূল্যবান অংশ।
১৯৬৯ সালে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় নথিভুক্ত হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।