কালের সাক্ষী অভয়নগরের খানজাহান আলী মসজিদ

যশোরের অভয়নগরে নীরবে নিভৃতে ঐতিহাসিক স্মৃতি বুকে ধারণ করে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হযরত খানজাহান আলী (রহ.) জামে মসজিদ। সাড়ে পাঁচশ বছর আগে ইসলাম ধর্ম প্রচারক ও খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার তৎকালীন স্থানীয় শাসক হযরত খাজা খানজাহান আলী (রহ.) এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
কারুকার্য ও নির্মাণশৈলী বিবেচনায় স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন এই মসজিদটি উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের শুভরাড়া গ্রামে ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫ শতকের শেষদিকে হযরত খানজাহান আলী (রহ.) তার অনুসারী ও সৈন্যবাহিনী নিয়ে যশোরের বারোবাজার এলাকা হতে ভৈরব নদের তীর ধরে পূর্বদিকে এগিয়ে যান। চলতি পথে তিনি অসংখ্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, দীঘি খনন ও ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদ নির্মাণকাজ শেষ হলে খানজাহান আলী (রহ.) বাগেরহাটে চলে গেলেও ধর্ম প্রচারের জন্য রেখে যান একজন খাদেমকে। তিনি মারা গেলে মসজিদের পশ্চিমে ভৈরব নদের তীরে তাকে সমাহিত করা হয়। যা স্থানীয়দের কাছে জ্বিনের কবর হিসেবে পরিচিত। মসজিদের পাশাপাশি কবরটি এক নজর দেখতে এখনো দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।
আরও পড়ুন : যেখানে দুই দেশের মানুষ নামাজ পড়ে
উপজেলার নওয়াপাড়া বাজার থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে সড়ক ও নদী পথে শুভরাড়া গ্রামে যাওয়া যায়। সেখানে গাছগাছালি ও বাঁশবাগানের মাঝে ভৈরব নদের তীরে এক গম্বুজ ও চার মিনারবিশিষ্ট খানজাহান আলী (রহ.) নামের এই মসজিদটি রয়েছে।
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্রের যশোর ও খুলনার ইতিহাস গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে ‘খলিফাতাবাদ’ অধ্যায়ে খানজাহান আলী (রহ.) কর্তৃক নির্মিত এই মসজিদের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত খানজাহান আলী (রহ.) বারোবাজার হতে ভৈরব নদের কুল ধরে অভয়নগরের শুভরাড়া গ্রামে এসে পৌঁছান। খ্রিষ্টীয় ১৪৪৫ থেকে ১৪৫৯ সালের মধ্যে কোনো এক সময় তিনি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী বাশুয়াড়ী গ্রামে মাত্র এক রাতের মধ্যে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে একটি দীঘিও খনন করেন।
আরও পড়ুন : দৃষ্টিনন্দন ফটিকছড়ির শাহী জামে মসজিদ
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী বর্গাকার মসজিদটির অভ্যন্তরীণ পরিমাপ ৫ দশমিক ১৩ বর্গমিটার। এর চার কোণায় চারটি অষ্টমকোণাকৃতি টারেট রয়েছে। মসজিদের ভেতরের আয়তন ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি গুণ ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি, উচ্চতা ২৫ ফুট। বাইরের পরিমাপের এক মিনারের মধ্যবিন্দু থেকে অন্য মিনারের দূরত্ব ২৮ ফুট ৬ ইঞ্চি। মসজিদটির উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে ৩টি দরজা অবস্থিত। পূর্ব দিকে অবস্থিত সদর দরজা খিলান ১১ ফুট এবং প্রস্থ ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি। বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মিত মসজিদে ছোটবড় সব ধরনের ইট রয়েছে।
আরও পড়ুন : শাহ সুজার দৃষ্টিনন্দন মল্লিকপুর জামে মসজিদ
এলাকাবাসী জানায়, ১৯৬৩ সালের আগে এটি একটি পরিত্যক্ত গম্বুজভাঙ্গা ধ্বংস্বস্তুপ ছিল। পরে এলাকাবাসী এটি কোনো মতে সংস্কার করে নামাজ আদায় শুরু করেন। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নজরে এলে মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মূল কাঠামো ঠিক রেখে বর্তমানে এই মসজিদের আয়তন বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করেন। পাশাপাশি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দূর দূরান্ত থেকে মসজিদের সৌন্দর্য্য ও জ্বিনের কবর দেখতে আসেন।