বড় ধসের কবলে পুঁজিবাজার

বড় ধরনের ধসের কবলে পড়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। আজ বুধবার (৭ মে) লেনদেন শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৯ পয়েন্ট বা তিন দশমিক শূন্য এক শতাংশ পতন হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮০২ পয়েন্টে।
পতনের ধাক্কায় একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। শেয়ার বিক্রির চাপে এদিন লেনদেন হয়েছে ৫১৬ কোটি টাকা।
ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধের খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে মতিঝিলে চার সিকিউরিটিজ হাউজের ১০ জন বিনিয়োগকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দেশের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতা। চলছে দেশের অর্থনীতিতে টানপোড়নসহ নানা অনিশ্চয়তা। চলছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের প্রতি চরম অনাস্থা। আবার এরই মধ্যে ভারত–পাকিস্তান এখন যুদ্ধে জড়িয়েছে। প্রতিবেশি রাষ্ট্র বিধায় এর প্রভাব আমাদের দেশে পড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। পুঁজি হারানোর ভয়ে অনেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ না করে চুপচাপ বসে আছেন। পরিস্থিতি পরিবর্তনের অপেক্ষা করছেন। অনেকে আবার বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন।
তারা বলেন, আজকে পুঁজিবাজারে প্রায় সব বিনিয়োগকারী শেয়ার সেল দিয়েছেন, পুঁজি ক্যাশ করার লক্ষ্যে। এই কারণে তাৎক্ষণিকভাবে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে বড় ধরনের ধসের কবলে পড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। একদিনেই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতন হয়েছে ১৪৯ পয়েন্ট। পতন হয়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৮৫টি কোম্পানির শেয়ারের দর। শেয়ারের দাম এখন যেখানে নেমেছে, এতটা খারাপ দশা আর কখনও ছিল না।
ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধের খবরে আতঙ্ক, তবে এটাকেই প্রধান করে আজকে এই ধরনের বড় পতন মানতে রাজি নয় পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, পুঁজিবাজারের দীর্ঘদিন ধরে পতন চলছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে পুঁজিবাজারের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস হয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে সাধারণসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা এখন চরমে। পুঁজি হারিয়ে সবাই এখন অসহায়বোধ করছে। অনেকেই লসে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে পুঁজি নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। যারা আছে তারা প্রায় সবাই বিনিয়োগ না করে হাতগুটিয়ে আছে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরায় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জানিয়ে বিশ্লেষকরা বলেন, তারা বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে ধৈর্য ও সচেতনতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাজারে অস্থিরতা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।
ডিএসইতে আজ লেনদেন শুরুতে শেয়ার বিক্রির চাপে প্রথম ১৯ মিনিটে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতন হয় ৯২ পয়েন্ট। বেলা বাড়ার পর এদিন শেয়ার বিক্রির চাপ আরও বাড়ে। এতে লেনদেন শুরুর প্রথম দুই ঘন্টা ৩২ মিনিটে সূচক ডিএসইএক্স পতন ১২৮ পয়েন্ট। এরপরও পতন থামেনি, সূচকের পতন আরও বাড়ে। লেনদেন শেষে সূচক ডিএসইএক্স পতন হয়েছে ১৪৯ দশমিক ৩০ পয়েন্ট। দিনশেষে সূচকটি কমে দাঁড়ায় চার হাজার ৮০২ দশমিক ৪১ পয়েন্টে। এদিন ডিএস৩০ সূচক ৪০ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৯৩ দশমিক ৪২ পয়েন্টে। আর ডিএসইএস সূচক ৪১ দশমিক ৯২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৭ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে।
আগের কর্মদিবস মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৫৪৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার। আজ লেনদেন হয়েছে ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে মূলধন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার মূলধন ছিল ছয় লাখ ৫৪ হাজার ৪০৬ কোটি ছয় লাখ টাকা। একদিনের ব্যবধানে মূলধন কমেছে ১০ হাজার ৬৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আজ লেনদেন হওয়া ৩৯৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে ৯টির এবং কমেছে ৩৮৫টির বা ৯৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫টির।
এদিন লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে এনআরবি ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিচ হ্যাচারির ৩৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৩১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের ১৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ১৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ফাইন ফুডসের ১০ কোটি চার লাখ টাকা এবং বারাকা পাওয়ারের আট কোটি ৮১ লাখ টাকারে শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
আজ দর কমার শীর্ষে উঠে এসেছে প্রাইম টেক্সটাইলের শেয়ার। কোম্পানিটির দর কমেছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। দর বাড়ার শীর্ষে উঠে এসেছে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।