বাজেটের ফলে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে উৎসাহিত হবে : বিএসইসি চেয়ারম্যান

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘পুঁজিবাজার-বান্ধব’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি বলেন, ‘বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের ব্যবধান সাত দশমিক ৫০ শতাংশ করার হয়েছে। এতে দেশি-বিদেশি ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে উৎসাহিত হবে।’
আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বেশকিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচটি দিকনির্দেশনা গুরুত্বসহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে—পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তি, নেতৃত্ব স্থানীয় দেশীয় ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ। একইসঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অনিয়মের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আগামীর অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পুঁজিবাজারের ভূমিকা নিশ্চিত করতে সরকারের নীতিগত সহায়তার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।’
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘সরকার পুঁজিবাজারের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের ব্যবধান পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাত দশমিক ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো করছাড় পাবে। এতে দেশি-বিদেশি লাভজনক এবং ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে।’
রাশেদ মাকসুদ আরও বলেন, ‘বাজেটে আরও একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলো, পুঁজিবাজারে কর্মরত ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর ধার্য কর শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য তিন শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে তারল্য সংকট এবং লেনদেনের স্বল্প ভলিউমের প্রেক্ষাপটে এই কর হ্রাসের ফলে পুঁজিবাজারে লেনদেন বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগও উৎসাহিত হবে।’
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে কর্মরত মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার ১০ শতাংশ কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। পূর্বে এই হার ছিল ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর ফলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজার উন্নয়নে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে আগ্রহী হবে।’ বাজারের টেকসই উন্নয়নে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের ৪ নভেম্বর এনবিআরের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রি থেকে অর্জিত মূলধনী মুনাফার ওপর সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে অর্ধেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল। এসব পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট হয়, সরকার পুঁজিবাজার উন্নয়নে আন্তরিক ও ইতিবাচক। বিএসইসি ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্টের বার্ষিক মেইনটেন্যান্স ফি ৪৫০ টাকা থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ কমিয়ে ১৫০ টাকা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব থেকে অর্জিত সুদের ২৫ শতাংশ ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডের জমারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সরাসরি উপকৃত হবেন।’
এ ছাড়া পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের দাবি বিবেচনায় এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্জিত ডিভিডেন্ডের ওপর ট্যাক্স মওকুফ এবং এক লাখ টাকার ঊর্ধ্বে অর্জিত ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর নির্ধারণ করে, তা চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করার বিষয়টি বাজেটে পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।