দর কমলেও লেনদেনের সেরায় বিচ হ্যাচারি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি বিচ হ্যাচারির ৬৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে সদ্য সমাপ্ত সপ্তাহে, যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট লেনদেনের পাঁচ দশমিক ৩৫ শতাংশ। লেনদেনের শীর্ষে উঠলেও সপ্তাহটিতে শেয়ারপ্রতি দর কমেছে ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। এতে কোম্পানিটির বাজার মূলধন কমেছে ৩৮ কোটি আট লাখ টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, ডিএসইতে গত বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিচ হ্যাচারির শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ৪৪ টাকা। আগের সপ্তাহের ৮ মে কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ৫৩ টাকা ২০ পয়সা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ারপ্রতি দর কমেছে ৯ টাকা ২০ পয়সা বা ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ।
গত বৃহস্পতিবার মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৮২ কোটি ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৪ টাকা, যা আগের সপ্তাহের ৮ মে ছিল ২২০ কোটি ২৫ লাখ ৩৪ হাজার ৩১৭ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে মূলধন কমেছে ৩৮ কোটি আট লাখ ৮৯ হাজার ৩৯৩ টাকা। গেল সপ্তাহে ৪১৩টি কোম্পানির এক হাজার ২৯৯ কোটি পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সেখানে সপ্তাহটিতে বিচ হ্যাচারির ৬৯ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের পাঁচ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়ায় ১৬ টাকা ৪৯ পয়সা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দর ৪৪ টাকায় কেনাবেচা হয়। যার ফলে সম্পদমূল্যের ২ দশমিক ৬৭ গুণ বেশি দরে বেচাকেনা হচ্ছে এই শেয়ার। যদিও ঈদের আগে গত ১১ মার্চ শেয়ারপ্রতি দর ছিল ১২৪ টাকা। সেখানে থেকে কমে ঈদের আগের শেষ কর্মদিবস গত ২৭ মার্চ শেয়ারপ্রতি দর হয়েছিল ১১০ টাকা। এরপরও কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। গত বৃহস্পতিবার শেয়ারপ্রতি দর হয়েছে ৪৪ টাকা। এত বেশি দরে কেন শেয়ারটি কেনাবেচা হলো, আর এখন কেন সেটা এত কম দরে কেনাবেচা হচ্ছে– সেই বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।
অপরদিক গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পিই রেশিও দাঁড়ায় সাত দশমিক ২১ পয়েন্টে। পিই রেশিও অনুসারে কোম্পানিতে বিনিয়োগ নিরাপদে রয়েছে। পুঁজিবাজারের কোনো কোম্পানির পিই রেশিও যদি সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ ধরে নেওয়া হয়। এ ছাড়া পিই রেশিও ডিজিট যদি ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত অবস্থান করে, তবে সেখানেও বিনিয়োগ নিরাপদ বলে ধরা হয়ে থাকে। তবে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসাবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। সেই হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। অর্থাৎ পিই রেশিও ৪০ এর ওপরে গেলে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পিই রেশিও যত বাড়বে ঝুঁকির মাত্রা তত বাড়তে থাকবে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে বিচ হ্যাচারির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে এক টাকা ৮৮ পয়সা। আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) একই সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৬০ পয়সা। চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিক (জুলাই-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে চার টাকা ৫৮ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল এক টাকা ৯২ পয়সা। আলোচিত তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে ৩৯ পয়সা। আগের অর্থবছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ ছিল এক টাকা ৩৮ পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৪৯ পয়সা।
এর আগের ২০২৩-২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এ জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট ছিল গত ১৫ ডিসেম্বর। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল দুই টাকা তিন পয়সা। সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল ৯৩ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল ১২ টাকা ৪৯ পয়সা। এরও আগের তিন অর্থবছরে ২ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারেনি কোম্পানিটি। কোম্পানিটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুই শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে এক দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে এক শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বিচ হ্যাচারি। ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৪১ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা চার কোটি ১৪ লাখ এক হাজার ২১টি। রিজার্ভে রয়েছে ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে এক দশমিক ১২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।