লোকসানি ইনফরমেশন সার্ভিসেসের দর বেড়েছে ৪৭ শতাংশ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইটি খাতের লোকসানি কোম্পানি ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেডের শেয়ার দর কারণ ছাড়াই বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। অপরদিক মূল্য আয় অনুপাত হিসেবে এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ অনিরাপদ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক এর প্রতি শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ৭২ টাকা ৬০ পয়সা। আগের সপ্তাহের গত ১৪ আগস্ট কোম্পানিটির এই শেয়ারের দর ছিল ৪৯ টাকা ৩০ পয়সা। এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ২৩ টাকা ৩০ পয়সা বা ৪৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭৯ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ২১৮ টাকা। আগের সপ্তাহের গত ১৪ আগস্ট মূলধন ছিল ৫৩ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার ১৪৮ টাকা। এক সপ্তাহে মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ২৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার ৭০ টাকা। এতে সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার গেইনারের শীর্ষে উঠে এসেছে।
শেয়ারটির দর বাড়া নিয়ে ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারে নানা গুঞ্জন ওঠেছে, শেয়ারদর এ ধরনের বৃদ্ধিকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না কোম্পানিটির শেয়ার ধারন করা বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, গত অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই মাচ) লোকসানে ডু্বেছে কোম্পানিটি। লোকসানে থেকেও এর কোম্পানিটির শেয়ার দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে, যা মানতে নারাজ। অপরদিকে শেয়ার দর এইভাবে বাড়ার কারণে কোম্পানিটিকে গত বুধবার ডিএসই নোটিস পাঠিয়েছিল। এর জবাবে গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি জানায়, কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। তাই কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে রেগুরেটরদের বিশেষ অনুরোধ করেন ধারন করা বিনিয়োগকারীরা।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দাঁড়ায় ৬০৫ পয়েন্টে। পিই রেশিও অনুসারে কোম্পানিতে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ ঝুঁকিতে আছে। পুঁজিবাজারের কোনো কোম্পানির পিই রেশিও যদি সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ ধরে নেওয়া হয়। এছাড়া পিই রেশিও ডিজিট যদি ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত অবস্থান করে, তবে সেখানেও বিনিয়োগ নিরাপদ বলে ধরা হয়ে থাকে। তবে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসাবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। সেই হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। অর্থাৎ পিই রেশিও ৪০ এর ওপরে গেলে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পিই রেশিও যত বাড়বে ঝুঁকির মাত্রা তত বাড়তে থাকবে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে তৃতীয় প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনে ইনফরমেশন সার্ভিসেসের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯ পয়সা। আগের বছরের (২০২৩-২০২৪) একই সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল দুই পয়সা। কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২০ পয়সা। গত তিন প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে ৮২ পয়সা। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে দুই টাকা ৭৫ পয়সা।
এর আগে ২০২৩-২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ২৩ ডিসেম্বর। কোম্পানিটির রেকর্ড ডেট ছিল গত ১৭ নভেম্বর। ওই বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল ১২ পয়সা। সমাপ্ত বছরে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল এক টাকা ৪৭ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল দুই টাকা ৯৬ পয়সা।
২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক। ‘বি’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। শেয়ার সংখ্যা এক কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার তিনটি। রিজার্ভে রয়েছে নেগেটিভ সাত কোটি ৬৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।