কাতার বিশ্বকাপে বুঁদ হতে যাচ্ছেন, জেনে নিন খুঁটিনাটি
প্রথমবারের মত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপ মঞ্চস্থ করার ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে কাতার। ৮টি সুসজ্জিত ফুটবল ভেন্যু সরাসরি দেখতে যারা দেশটিতে পা রাখতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে নানা চমক। এনটিভি অনলাইনের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের আজকের পর্বে জেনে নিন কাতার নিয়ে খুঁটিনাটি।
বিশ্বকাপকে ঘিরে কাতারের প্রস্তুতি
গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ—এই প্রতিযোগিতার জন্য কাতার প্রস্তুত করেছে আটটি স্টেডিয়াম। ইএসপিএনের প্রতিবেদন অনুসারে, ৮০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন লুসাইল স্টেডিয়ামে হবে এই বৈশ্বিক আসরের ফাইনাল ম্যাচ। যেটা এরই মধ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বর মিশরের জামালেক ও সৌদি আরবের আল-আহলি ক্লাবের প্রীতি ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হয়েছে।
আটটি স্টেডিয়ামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করবে আল-বাইত ও আল জানুব স্টেডিয়াম। এই দুটি স্টেডিয়ামই তৈরি করা হয়েছে মুক্তার আদলে। যার নান্দনিকতা মুগ্ধ করবে ফুটবল ভক্তদের। এ ছাড়া এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যাওয়ার জন্য কাতার দারুণ ব্যবস্থা করেছে। দর্শকদের সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছে মেট্রো রেল- পাঁচ লেনের মহাসড়ক। যার ফলে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানেই আল-বাইত থেকে আল জানুবে যাওয়া যাবে। তাই যাতায়াতের সময় বিড়ম্বনা নিয়ে খুব একটা ভাবতে হচ্ছে না ভক্তদের।
কিছু স্টেডিয়ামের চারপাশ মরুভূমিতে ঘেরা। চারপাশে দোকান-পাট, ক্যাফে কিছু নেই। যেখানে এখনও নির্মাণ কাজ চলমান। ইএসপিএন জানিয়েছে, সেই মরুতে ঘেরা জায়গাগুলো ব্যবহার করা হবে পার্কিং স্পট হিসেবে। এ ছাড়া বসবে ফ্যান জোন। থাকবে খাবারের ব্যবস্থা। ফ্যানদের জন্য থাকবে মজার মজার জিনিস। তাই স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গেলে খাবার-দাবার নিয়েও খুব একটা চিন্তা করতে হচ্ছে না ভক্তদের।
বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়া ভক্তদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা খুব বড় পরীক্ষা ছিল কাতারের জন্য। সেই ভাবনা মাথায় রাখায় রেখে কাজ করছে দেশটি। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হতে হতে সেসবের অনেক কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাই কিছু নতুন হোটেল ও বাসা তৈরি করা গেলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। লুসাই স্টেডিয়ামের কাছে এর জন্য একটি মেগা প্রজেক্টের কাজ ধরেছে কাতার। কিন্তু ওই প্রকল্প শেষ হতে হতে এখনো পাঁচ বছর সময় লাগবে। তাই আবাসন ব্যবস্থা কিছুটা বিড়ম্বনায় ফেলতে পারে ভক্তদের।
ভক্তরা কোথায় থাকবেন?
কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে গেলে ভক্তরা কোথায় থাকবেন সেটা নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছে ইএসপিএন। তাদের প্রতিবেদন অনুসারে, ধারণা করা হচ্ছে বিশ্বকাপ চলাকালীন ১৩ মিলিয়ন দর্শক কাতারে যাবেন। যা দেশটির বর্তমান সামগ্রিক জনসংখ্যার অর্ধেকের সমান। বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়াদের জন্য খারাপ খবর হলো—তাদের সবার কাতারে ভালোভাবে থাকার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। দোহার বেশিরভাগ আবাসিক হোটেলগুলো বুকিং দিয়ে রেখেছে আয়োজক কমিটি। তবে মূল টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আরও ২০ হাজার রুমের ব্যবস্থা করবে স্বাগতিক দেশ। তবে তা চাহিদার কাছে কিছুই নয়।
থাকার জন্য দর্শকরা বানানা (কলা) দ্বীপ বেছে নিতে পারেন। দোহা থেকে নৌকায় করে ২০ মিনিট দুরুত্বে বানানা আইল্যান্ডের স্লিপিং পডে থাকতে পারেন। যেখানে প্রতিরাতে ৮০ ডলারের বিনিময়ে থাকতে পারবেন ভক্তরা। যদিও এই স্লিপিং পডগুলো বেশিরভাগই বুকিং হয়ে গেছে।
এ ছাড়া পানির ওপর তৈরি করা হয়েছে ভিলা। যার জন্য প্রতি রাতে চড়া দাম দিতে হবে। বানানা দ্বীপের সূত্র ইএসপিএনকে জানিয়েছে যে, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের পরিবারের কাছ থেকে ইতিমধ্যে বুকিং নেওয়া হয়েছে ওই বিলাসবহুল ভিলাগুলো।
এ ছাড়া আল খোরে প্রতি রাতে ৩৮০ ডলারে ডিলাক্স তাঁবুতে থাকা যাবে। আল ওয়াকরাহ ক্যাম্পে কয়েক হাজার কেবিন দেওয়া হবে। সেখানে প্রতি রাতে দিতে হবে ১৯০ ডলার। আল ওয়াকরাহ ক্যাম্প এখনও নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। আয়োজকদের আশ্বাস টুর্নামেন্ট শুরুর আগ মুহূর্তে সেটির নির্মাণ শেষে হবে সঙ্গে আরও আবাসের ব্যবস্থা করা হবে।
কাতারে পরিবহন ব্যবস্থা
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার আকারে খুব ছোট। তাই বলা বাহুল্য যে—বিশ্বকাপে বুঁদ হতে আশা ভক্তদের খুব বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে না। এমনকি এক স্টেডিয়াম থেকে আরেক স্টেডিয়ামে যাত্রাও কঠিন হবে না। ইএসপিএন বলছে, বিশ্বকাপকে ঘিরে কাতার নতুন রাস্তা ও মেট্রো সিস্টেম তৈরি করেছে। যাতে সব স্টেডিয়ামে সুংযুক্ত করা যায়। এর ফলে সময় কমার পাশাপাশি অর্থও বাঁচবে দর্শকদের। কারণ মেট্রোতে একদিনের পাসের জন্য খরচ মাত্র ৬ রিয়াল। ডলারের হিসাবে ১.৬৫ ডলার। যাদের কাছে ম্যাচের টিকেট আছে তাদের জন্য আরও সুবিধা। কারণ বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকীলন ম্যাচের টিকেটধারী দর্শকরা যাতায়াত করতে পারবেন বিনামূল্যে।
এ ছাড়া কাতারেও আছে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস উবারের ব্যবস্থা। যা খুবই কমে পাওয়া যায়। যেমন—হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মধ্য দোহা পর্যন্ত ৩০ মিনিটের যাত্রায় খরচ হয় মাত্র ৪০রিয়াল।
বিশ্বকাপের সময় কাতার কতটা নিরাপদ?
বিশ্বকাপের দেশে যাওয়ার আগে সবার মাথাতেই থাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা। অন্যান্য স্বাগতিক দেশের মতো কাতারেও বিশ্বকাপকে ঘিরে শক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য প্রতিবেশি দেশগুলোরও সাহায্য নিয়েছে কাতার। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল এয়ারফোর্স বিশ্বকাপ চলাকালীন আকাশে টহল দেবে। এ ছাড়া মার্কিন বিমান ঘাঁটিও নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সহায়তা প্রদান করবে।
বিশ্বকাপ চলাকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্ত করার জন্য প্রতিটি স্টেডিয়ামে প্রায় ২ হাজার সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ ছাড়া মাঠে ঢোকার সময় দর্শকদের ভালো করে চেক করা থেকে শুরু করে সিটে বসা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করবে আয়োজকরা। তাই আক্ষরিক অর্থে বলা চলে, নিরাপত্তার দিক দিয়েও ভালো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কাতার।
বিশ্বকাপের দেশে অ্যালকোহলের ব্যবস্থা
অ্যালকোহল নিয়ে কাতারে বিধি-নিষেধ রয়েছে। বিশ্বকাপেও যার প্রভাব পড়বে। যেমন—খেলা চলাকালীন গ্যালারিতে বিয়ার কিংবা অ্যালকোহল জাতীয় কিছু নেওয়া যাবে না। তবে ম্যাচের আগে ও পরে দর্শকরা চাইলে গ্রহণ করতে পারবেন। এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। ইএসপিএনের প্রতিবেদন অনুসারে, অমুসলিম দর্শক-সমর্থকরা অনুমতি নিয়ে কাতার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছ থেকে অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় কিনতে পারবেন। এ ছাড়া অনুমোদিত এলাকার বাইরে গিয়ে কেউ অ্যালকোহল গ্রহণ করলে ছয় মাসের কারাদন্ডের পাশাপাশি ৮০০ ডলার জরিমানা গুনতে হবে। ম্যাচের দিন ফ্যানজোন ও দোহার বিদা পার্কে অ্যালকোহল বিক্রি করা হবে। এ ক্ষেত্রেও আছে সময়ের নির্দিষ্টতা।
সবমিলে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত কাতার। এরই মধ্যে বিশ্বকাপ মহারণে বুঁদ হতে ধীরে ধীরে কাতারে উড়াল দিচ্ছেন দর্শকরা। আবাসনে কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হলেও বাকি সব কিছু নিয়ে বেশ আরাম-আয়েশেই বিশ্বকাপ উপভোগ করতে পারবেন ফুটবল ভক্তরা।