টেস্টে ম্যাচ ফি বাড়ে, বাড়ে না শুধু ব্যাটিংয়ের মান!
ব্যবস্থাপনার ভাষায় প্রেষণা মানে অনুপ্রেরণা দেওয়া। কর্মীদের প্রেরণা দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতনরা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অনুপ্রেরণা দিতেই কি না টেস্টে ম্যাচ ফি বাড়িয়ে আট লাখ টাকা করা হয়েছে। কাদের মূলত প্রেরণা দেওয়া হয়? যারা এগিয়ে যাওয়ার উদ্যম নিয়ে কাজ করে, তাদের উদ্যমী করে তুলতেই প্রেষণা। টেস্টের বাংলাদেশকে দেখে বোঝার উপায় নেই, ঠিক কী কারণে বাড়ানো হয়েছে ম্যাচ ফি! বিশেষত, ব্যাটিং তো পাড়ার ক্রিকেটের চেয়ে তথৈবচ!
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটাররা চূড়ান্ত ব্যর্থ। এখন পর্যন্ত তিন ইনিংসে ব্যাট করেছে দলটি। ঘরের মাঠ, চেনা কন্ডিশন, উইকেটের নাড়িনক্ষত্র চেনা। তবু, বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মনে হলো লঙ্কানরা স্বাগতিক, আমরা অতিথি।
তিন ইনিংসে বাংলাদেশের মোট রানে একটু দৃষ্টিপাত করা যাক। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ১৮২, ১৮৮। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে আরও বাজে অবস্থা। রান করেছে ১৭৮। রানগুলো যোগ করলে হয় ৫৪৮। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার রান ৫৩১। সব দিন সবার সমান যায় না। অথচ কী অদ্ভুত, ব্যর্থতায় বাংলাদেশের সবাই সমান। অধারাবাহিকতায় দারুণ ধারাবাহিক তারা। দায়িত্ববোধের আশপাশেও নেই। কী, কেন, কীভাবে, কখন উইকেট বিলিয়ে আসছে—ব্যাটারদের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রথম টেস্টে লিটন দাসের উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হওয়া, নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিংয়ে তড়িঘড়ি করে শুরুতেই রিভিউ নেওয়াতে মনে হলো এরা কত আনাড়ি।
আদতে তা নয়। দলের ব্যাটাররা ভালো খেলেই সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু, জাতীয় দলে এলে যেন ব্যাট করতে ভুলে যান। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে দল করেছে ১৮৮, মুমিনুল হকের একাই ৮৭। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইণিংসে জাকির হাসান ৫৪ রান করেন। তাতে অবশ্য এড়ায়নি ফলোঅন। ইদানিং নাইটওয়াচম্যান হিসেবে তাইজুল ইসলামকে খেলানো হচ্ছে। শেষে একজন ব্যাটার যেন হাল ধরতে পারে। কিসের কী, সেই পরিকল্পনাও ব্যর্থ!
টেস্টে বাংলাদেশ মোটেও নবীন দল নয়। ২৪ বছর ধরে খেলছে। এতদিন পর এসেও যদি একটি দল এমন করে তখন ব্যাখ্যা দেওয়ার অবকাশ থাকে না। এমন বিবর্ণতায় টেস্ট থেকে অলিখিতভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই। ভক্তরাও আর আশা করে না। তবু, তারা খেলে যান। খেলেন, হারবেন বলে।
এভাবে চললে বাংলাদেশ টেস্ট খেলছে, তা হয়তো ভুলে যাবে সবাই। কাউন্টি ক্রিকেটে যতটা প্রতিযোগিতা হয়, সাদা পোশাকে বাংলাদেশের খেলায় তার সিকিভাগও হয় না। টেস্ট ক্রিকেট আভিজাত্যের খেলা। সেখানে বাংলাদেশ অভিজাত অঙ্গনে যেন দিন দিন বোঝা হচ্ছে। প্রেষণাও যেখানে বেলাশেষে মুখ থুবড়ে পড়ে।