‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ নিয়মের বলি হচ্ছেন না তো অলরাউন্ডাররা?
যে কোনো দলের জন্যই একজন অলরাউন্ডার আরাধ্য ধন। একজন অলরান্ডার খেলা মানেই দুজনের রোল প্লে করা। কখনও তিনি ব্যাট হাতে ঝড় তুলবেন, কখনওবা বল হাতে ছড়ি ঘোরাবেন। দুজন খেলোয়াড়ের চাহিদা মেটানোয় একজন অলরাউন্ডার যে কোনো দলের জন্যই আশির্বাদ।
কিন্তু, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে কি সেই মর্যাদা হারাচ্ছেন অলরাউন্ডাররা? প্রশ্নটি ওঠার পেছনে বড় কারণ হলো—ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়ম। গেল বছর থেকে আইপিএলে আসা এই নিয়মের কারণে সুবিধা পাচ্ছে দলগুলো। ম্যাচের যে কোনো সময়ই তারা চাইলে একজন খেলোয়াড় বদলে ফেলতে পারছে। বলা চলে আইপিএলের ম্যাচগুলো হয়ে উঠেছে ১২ জনের। অধিনায়ক ও টিম ম্যানেজম্যান্টকে একাদশের পাশাপাশি নির্বাচন করতে হয় কে হবেন ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’। এমনকি নির্বাচিত ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের নামও আগে বলা হয় না। দলের প্রয়োজন মতো চাইলে ব্যাটার কিংবা বোলার যে কোনো কাউকেই নামাতে পারছে দলগুলো।
ক্রিকেটের এই নয়া নিয়ম আইপিএলের দলগুলোকে সুবিধা দিচ্ছে বেশ। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুসারে সুযোগ লুফে নিচ্ছে তারা। এতে আদতে গুরুত্ব হারাচ্ছেন অলরাউন্ডাররা। কারণ, আইপিএলের দলগুলোকে এখন অলরাউন্ডার খেলানো নিয়ে ভাবতে হয় না। তারা চাইলে একজন ব্যাটার প্রয়োজন মতো নামাতে পারছে কিংবা চাইলে একজন বোলারও প্রয়োজন মতো বদলে নামাতে পারছে। তাতে কোনো অলরাউন্ডারের আর দরকার পড়ছে না।
দুটি ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক। শিভাম দুবে একজন অলরাউন্ডার। অথচ প্রতি ম্যাচে তিনি নামছেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হয়ে ব্যাট করতে। এতে শুধু ব্যাটিংটাই হচ্ছে, বোলিংয়ে সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। আবার, হার্দিক পান্ডিয়া প্রতি ম্যাচে খেললেও বল করতে পারছেন না। দেখা যাচ্ছে মুম্বাইয়ের হয়ে ব্যাট করছেন তিনি কিন্তু বোলিং করছেন না। অনেকে বলছেন চোট লুকিয়ে শুধু ব্যাটিং দিয়েই আইপিএল চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এতে করে কী হলো? অলরাউন্ডার থেকে পান্ডিয়া হয়ে গেলেন ব্যাটার। নিজের বোলিং রোলটা থেকেই একটু একটু করেই সরে পড়ছেন।
রাহুল তেওতিয়ার বেলাতেও একই দৃশ্য। তিনি ফিনিশার হিসেবে খেললেও দলের প্রয়োজনে লেগ স্পিন করতে পারেন। কিন্তু, সেটা আর করানো হচ্ছে না। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়ম আসার পর আর তাকে বল করতে হয় না। শুধু ব্যাট করলেই চলে।
এই ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়ম নিয়ে অনেকেই বিরক্ত। এমনকি ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাও এই নিয়মটার বিরুদ্ধে। কদিন আগে তিনি বলেছেন, ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মটা আমার খুব একটা পছন্দ নয়। এর ফলে অলরাউন্ডারদের প্রয়োজন কমে গিয়েছে। ক্রিকেটটা এখন ১২ জনের খেলা হয়ে গিয়েছে। এর ফলে ক্রিকেটটা নষ্ট হচ্ছে। দর্শকের জন্য যদিও খুব উপভোগ্য হচ্ছে ব্যাপারটা।’
রোহিতের মতে এই নিয়মের ফলে ভারতীয় অলরাউন্ডারেরা সুযোগ পাচ্ছেন না। ওয়াশিংটন সুন্দরের মতো ক্রিকেটারকে দলে নেওয়া হচ্ছে না। শিভাম দুবে ব্যাট হাতে রান করলেও বল করছেন না। অধিনায়কের ব্যাখ্যা, ‘ভারতীয় ক্রিকেটের দিক থেকে দেখতে গেলে ওয়াশিংটন, দুবেরা বল করছে না। এটা দলের জন্য ভাল দিক নয়। কী করব জানি না। দলে ১২ জন ক্রিকেটার রয়েছে। খেলার পরিস্থিতি বুঝে এক জনকে দলে আনা হচ্ছে। এটা দেখতে খুব ভালো লাগছে। কিন্তু, এই বাড়তি ক্রিকেটার দলে আসার পর থেকে সাত বা আট নম্বরের ব্যাটার সুযোগ কম পাচ্ছেন।’
শুধু রোহিত নন, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার অ্যাডাম গিলক্রিস্টও এই নিয়মের বিপক্ষে। গিলির মতে, এই নিয়মটা ক্রিকেটের স্বার্থ দেখে নির্মাণ করা হয়নি। অসি তারকা বলেছেন, ‘এই নিয়মটা দর্শকের জন্য। ক্রিকেটের স্বার্থ দেখে এই নিয়ম তৈরি করা হয়নি। আমার মনে হয়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমনিতেই অনেক বিনোদন রয়েছে। সেখানে কোনও বাড়তি মাসালার প্রয়োজন ছিল না।’
তবে এত কথার মাঝেও এটা ঠিক যে, ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়ের নিয়মটি আইপিএলের আকর্ষণ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। দর্শকরাও এই নিয়ম উপভোগ করছে। দলগুলোও সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু, দিন শেষে নিয়মটি অলরাউন্ডারদের জন্য হয়ে উঠেছে—বিষফোঁড়া!