অ্যালিস কোচম্যান—ক্রীড়াঙ্গনে কৃষ্ণাঙ্গ নারীর পথচলা সহজ করেন যিনি

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে নারীর অবদান কম নয়। এখন নারীদের পথচলা যতটা সাবলীল, আগে তেমন ছিল না। গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ হলে দুনিয়া অন্ধকার। তবে, আর সবকিছুর মতো ব্যতিক্রম আছে এখানেও। বর্ণবাদ, লোকের চোখরাঙানি, প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে সাফল্যের পথে অনেক কৃষ্ণাঙ্গ নারীই রেখে গেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর।
এদের মধ্যে অ্যালিস কোচম্যান একেবারে আলাদা। তিনি পথ দেখিয়েছেন বাকিদের। কৃষ্ণাঙ্গ নারীরাও জিততে পারে, সেই বিশ্বাসের বীজ প্রথম বুনেছিলেন কোচম্যান। তার হাত ধরেই সহজ হয় ক্রীড়াঙ্গনে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের পথচলা।
কোচম্যানের গল্পটা শুরু হয় ৯ নভেম্বর ১৯২৩ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আলবেনিতে ফ্রেড ও এভলিন কোচম্যান দম্পতির পঞ্চম সন্তান হিসেবে তার জন্ম হয়। অ্যালিসরা মোট ১০ ভাইবোন। বাবার সামর্থ্য ছিল না তাকে পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের সুবিধা দেওয়ার। ঘরে তৈরি সরঞ্জামে চলত অনুশীলন। অ্যালিস কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারতেন না গায়ের রং কালো বলে!
তিনি দমে যাননি। জয়ীদের অবশ্য দমতে নেই। কোনো পথ না পেলে নিজেরাই নিজেদের পথ তৈরি করেন। চেষ্টা চালিয়ে যান সফলতার আগ পর্যন্ত। কোচম্যান নজরে আসেন স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ‘হাই জাম্প’-এ রেকর্ড ভাঙা পারফর্ম করে।
তারপর আর পিছু ফিরতে হয়নি। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৮, টানা দশ বছর হাই জাম্পের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের টাইটেল জিতে নিজের সম্পত্তি করে নেন যেন! অ্যালিসের সদম্ভ বিচরণ বজায় থাকে ৫০, ১০০ মিটার এমনকি দলগত ৪০০ মিটার ড্যাশেও!
১৯৪৮ সালের অলিম্পিকে হাই জাম্পে প্রথমবার জেতেন স্বর্ণপদক। যে পদক তাকে এনে দেয় অমরত্বের স্বাদ। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ের কৃতিত্ব বগলদাবা করেন। ভেঙে দেন শেকল। ২৫ বছর বয়সে যা করে গেছেন, তাতে সহজ করে গেছেন আগামীর নারীদের পথ। হাই জাম্পের বাইরে বাস্কেটবলেও অ্যালিসের ছিল সমান পারদর্শিতা। নিজের একাডেমি তুসকিগি ইনস্টিটিউটের বাস্কেটবল দলের হয়ে জেতেন তিনটি চ্যাম্পিয়নশিপ।
অলিম্পিক জয়ের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে পড়াশোনা ও চাকরির প্রয়োজনে থামিয়ে দেন খেলা। ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের হল অব ফেমে জায়গা পান। ১৯৭৯ সালে জায়গা মেলে নিজ রাজ্য জর্জিয়ার হল অব ফেমে। ১৯৯৬ সালে বোধকরি জীবনের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতিটাই পান অ্যালিস। সর্বকালের সেরা ১০০ অ্যাথলেটের একজন হিসেবে নিজেকে দেখতে পাওয়াট সৌভাগ্যের বটে।
২০১৪ সালে ৯১ বছর বয়সে কার্ডিয়াক ব্লক হয়ে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করা কিংবদন্তি অ্যালিস কোচম্যান দুনিয়াজুড়ে কেবল কৃষ্ণাঙ্গ নয়, বরং সব নারী ক্রীড়াবিদের আদর্শ হয়ে থাকবেন।