পারল না বাংলাদেশ

হামজা চৌধুরী শটটা নিয়েছিলেন গোল বরাবর। ৯৫ মিনিটে তার করা শটটি জালের বাইরে স্পর্শ করে। স্বভাবসুলভ হাসি দিয়েছিলেন তিনি। তারপরেই মুখে গুমোট অন্ধকার। হামজার মলিন মুখটা হয়ে রইল গোটা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। চেষ্টার কমতি রাখেনি ১১ জন। তবু, সন্ধ্যেটা ছিল না বাংলাদেশের।
এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে লড়াই করেও হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। জাতীয় স্টেডিয়াম ঢাকায় আজ মঙ্গলবার (১০ জুন) সিঙ্গাপুরের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ২-১ গোলে।
প্রধমার্ধে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণাত্মক ঢংয়ে শুরু করে। ৪৮তম মিনিটে দুজনকে কাটিয়ে বক্সে ক্রস বাড়িয়েছিলেন রাকিব। কিন্তু সেটাতে পা ছোঁয়াতে পারেননি বদলি নামা শাহরিয়ার ইমন।
স্রোতের বিপরীতে ম্যাচের ৫৫ মিনিটে দুর্ভোগ ডেকে আনে বাংলাদেশ। বক্সের ভেতর উইং এর শট ব্লক করেন তপু বর্মন। কিন্তু পুরোপুরি ক্লিয়ার হয়নি। আবারও গোলে শট করে সিঙ্গাপুর। মিতুল মারমা ঠেকিয়ে দিলেও ফিরতি বল পেয়ে যান ইখসান ফান্দি। কোনো ভুল করেননি তিনি। বল জড়িয়ে দেন জালে। ২-০ গোলের এগিয়ে যায় সফরকারীরা।
৬২ মিনিটে ডান প্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠেছিল বাংলাদেশ। বক্সের মধ্যে ঢুকে কাছের পোস্টে শটও নিয়েছিলেন ইমন। বল লাগে সাইড নেটে। ৬৪ মিনিটে তপুকে কাটিয়ে বক্সে ঢোকার চেষ্টায় ছিলেন ফান্দি। দৌড়ে এসে তা ক্লিয়ার করেন তারিক কাজী।
৬৭ মিনিটে বাংলাদেশের গ্যালারিতে প্রাণ সঞ্চার করেন রাকিব। হামজা থ্রো পাস বাড়ান রাকিবকে। বক্সের মাথায় থেকে তাতে পা ছোঁয়ান এই ফরোয়ার্ড। বল সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক ইজওয়ানের হাতে লাগলেও আটকাতে পারেননি তিনি। বল গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যায় জালে। আবারও নিরব গ্যালারি জেগে উঠে উল্লাসে।
৭৭ মিনিটে হামজার ফ্রি-কিক কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করে সিঙ্গাপুর। তবে সেই কর্ণার থেকেও সুবিধা আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ। ৮১ মিনিটে টানা চারটি কর্ণার পায় বাংলাদেশ। মোরসালিনের প্রথম কর্ণার থেকে মাথা ছুঁইয়েছিলেন বদলি নামা আল আমিন। কিন্তু সিঙ্গাপুরের এক ফুটবলারের গায়ে লেগে বক্সের বাইরে চলে যায়। চতুর্থ কর্ণারটি নেন হামজা। সেখান থেকে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল বাংলাদেশ। গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন সিঙ্গাপুরের বদলি খেলোয়াড় সিজওয়ান বুহারি।
৮৭ মিনিটে ডান প্রান্ত ধরে নিজেদের অর্ধ থেকে আক্রমণে উঠেছিলেন ইমন। দুইজনকে কাটিয়ে বক্সেও ঢুকে পড়েছিলেন।কিন্তু এরপরই বলের নিয়ন্ত্রণ হারান তিনি। আরেকবার হতাশ হতে হয় বাংলাদেশকে।
৮৯ মিনিটে রাকিব ক্রস বাড়ান বক্সে। ফাঁকায় বল পেয় যান ফাহিম। কিন্তু উড়িয়ে ছক্কা মারেন তিনি। বল চলে যায় গোলবারের অনেক উপর দিয়ে।
সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার কাছে গিয়েছিলেন ফাহিম। ৯১ মিনিটে বাম প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠেছিলেন তিনি। দুজনকে কাটিয়ে চলে গিয়েছিলেন বক্সে। সেখানে তাকে আটকে দেন সিঙ্গাপুরের ডিফেন্ডার। ফাহিম পেনাল্টির আবেদন করলেও রেফারি সাড়া দেননি।
যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে ডান প্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠেছিল বাংলাদেশ। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া হামজার বুলেট গতির শট চলে যায় গোলবারের একটু বাইরে দিয়ে। তাতে কপাল পোড়ে বাংলাদেশের।
ম্যাচের শেষ মিনিটে বাংলাদেশকে রুখে দেন সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক ইজওয়ান। বক্সের মধ্যে ক্রস বাড়িয়েছিলেন ইমন। ঠিকঠাক মাথা ছুঁইয়েছিলেন তারিক। টপকর্ণার দিয়ে বল চলে যাচ্ছিল জালে। শেষ মুহুর্তে আঙ্গুলের ছোঁয়ায় বল গোলবারের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন গোলরক্ষক।
এর আগে ম্যাচের প্রথম সুযোগ পেয়েছিল সিঙ্গাপুর। অষ্টম মিনিটে লং থ্রো থেকে গোল প্রায় পেয়ে গিয়েছিল সিঙ্গাপুর। কিন্তু ফাঁকা জালেও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি তারা।
দশম মিনিটে প্রথম আক্রমণ শানায় বাংলাদেশ। বক্সে ক্রস বাড়িয়েছিলেন শাকিল আহাদ তপু। তবে বক্সে কাউকে খুঁজে পাননি তিনি।
১৫ মিনিটে লং বল থেকে আবারো বাংলাদেশকে ভড়কে দিয়েছিল সিঙ্গাপুর। বক্সের মধ্যে থেকে দুর্দান্ত এক হেড করেছিলেন ইখসান ফান্দি। কিন্তু পোস্টের পাশ ঘেসে বেড়িয়ে যায় সেটা।
১৭ মিনিটে তিনজনকে কাটিয়ে বক্সের মধ্যে ক্রস বাড়িয়েছিলেন শমিত। কিন্তু বক্সে ঘুঁজে পাননি কাউকে। ক্লিয়ার করে দেন সিঙ্গাপুরের ডিফেন্ডার।
ম্যাচের ২০ মিনিটে ডানপাশ থেকে ক্রস বাড়ায় সিঙ্গাপুর। সেখান থেকে বল পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেনি বাংলাদেশ। বল পেয়ে যায় ফান্দি। তার বাঁ-পায়ের শট ব্লক হয় শমিতের গায়ে লেগে। ম্যাচের ২৪ মিনিটে অহেতুক ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ফাহমিদুল।
২৫ মিনিটে আবারো আক্রমণে উঠে বাংলাদেশ। একজনকে কাটিয়ে রাকিব পাস দিয়েছিলেন ফাহমিদুলকে। বাংলাদেশি এই ফরোয়ার্ডের শট ব্লক হয় সিঙ্গাপুরের ডিফেন্ডার রায়হানের গায়ে লেগে।
৩০ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বক্সের সামনে ফাঁকায় বল পেয়ে যান সফরকারীদের ফরোয়ার্ড ইখসান ফান্দি। দূরের পোস্টে নেওয়া তার শট আটকে দিয়ে বাংলাদেশকে বিপদ মুক্ত করেন মিতুল মারমা।
পরের মিনিটেই গোলের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বক্সে দুর্দান্ত একটি ক্রস দিয়েছিল শোমিত। কিন্তু সেটার নাগাল পাননি রাকিব। এগিয়ে এসে বল গ্লাভস বন্দি করেন সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক ইজওয়ান মাহমুদ।
৩০ মিনিটে প্রান্ত ধরে বল নিয়ে ছুটছিলেন ফাহমিদুল। বক্সের বাইরে তাকে ফাউল করেন রায়হান। সেটপিস পেয়ে যায় বাংলাদেশ। হামজা চৌধুরির ফ্রি-কিক চলে যায় বারের একটু উপর দিয়ে।
৩৮ মিনিটে আবারো নিজের ক্যারিশমা দেখান শোমিত। ফা৭কায় থাকা ফাহমিদুলকে বাড়িয়েছিলেন দুর্দান্ত। সেই বল ধরে বক্সে চলে গিয়েছিলেন ফাহমিদুল। একজনকে কাটিয়ে শটও নিয়েছিলেন গোলে কিন্তু সেটা ব্লক হয়ে যায়
৪০ মিনিটে এবার ফাহমিদুল নিজেই থ্রোবল দিয়েছিলেন রাকিবকে। কিন্তু অফসাইডের ফাঁদে পড়েন তিনি।
প্রথমার্ধের শেষদিকে এসে সেই পুরনো রোগেই ভুগলো বাংলাদেশ। ম্যাচের ৪৪ মিনিটে বক্সের মধ্যে বল পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেননি তারেক কাজী। জটলার মধ্যে বল পেয়ে যায় ইখসান ফান্দি। সিঙ্গাপুরের এই বড় তারকার শট এবার আর আটকাতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম গোল পেয়ে যায় সফরকারীরা।
ম্যাচের একেবারে শেষ মুহুর্তে কর্ণার পেয় যায় বাংলাদেশ। শমিতের কর্ণার থেকে হেড চলে যায় সিঙ্গাপুরের ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে বারের একটু বাইরে দিয়ে।