ফুটবলের ‘ফ্রড লিজেন্ড’ কে এই কার্লোস কাইজার?

ব্রাজিলকে যদি বলা হয় ফুটবলের স্বর্গরাজ্য, আপত্তি তুলবে না কেউই। ১৪ আউন্সের চর্মগোলক পায়ে নিয়ে পেলে, জিকো, রোনালদো, রোনালদিনহো, কাকা, নেইমাররা কী না করেছেন? কেড়েছেন কোটি ভক্তের মন। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের এখনও কেউ পেছনে ফেলতে পারেনি। তবে, চাঁদেও কলঙ্ক থাকে। কিংবদন্তির আঁতুড়ঘর ব্রাজিলের এতসব রথী-মহারথীর ভীড়ে ছিলেন একজন ‘ফ্রড-লিজেন্ড!’
নাম তার কার্লোস কাইজার। পজিশন ফরোয়ার্ড। ১৩ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ার। খেলেছেন ইউরোপ আমেরিকার নয়টি ক্লাবে। ভাবছেন, এত বর্ণিল যার খেলোয়াড়ি জীবন, তাকে ভুয়া কিংবদন্তি কেন বলা হলো? কারণ, কাইজারের সবটাই কাগজে কলমে। ১৩ বছরে মাঠে নামেননি একটি ম্যাচেও!
ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী বলা হয় তাকে। খোঁজ নিলে বোধহয় দেখা যাবে, এরচেয়ে বড় ধোঁকাবাজ দুনিয়ায় কমই আছে! কী করেছিলেন কাইজার? তারই ফিরিস্তি শোনাব আপনাদের!
কাইজার জানতেন ফুটবলের ফ'টাও পারেন না তিনি। তাকে দিয়ে হবে না। কিন্তু ফুটবলে যে তারকা হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ আর বর্ণাঢ্য জীবনের হাতছানি, তা হাতছাড়া করতে চাননি। ১৯৭৯ সালে শুরু করেন তথাকথিত ক্যারিয়ার। তখনকার সময়ের ব্রাজিলিয়ান কয়েকজন তারকা ছিল তার বন্ধু। যে তালিকায় নাম আছে কিংবদন্তি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার রেনাতো গাউচো, কার্লোস আলবার্তো তরেসদের।
জুটিয়ে ফেলেন নামকরা কিছু ক্রীড়া সাংবাদিক বন্ধুও। ওরা মিথ্যে আর্টিকেল লিখতো কাইজারের হয়ে। ফ্রান্সে ছিলেন ছয় মাস, অথচ তার এক বন্ধু লেখেন- ফ্রান্সে আট বছরের দুর্দান্ত সময় কেটেছে কার্লোস কাইজারের। আরেক সাংবাদিক তো বন্ধুর জন্য এগিয়ে গেলেম কয়েক কাঠি। লেখেন, কাইজারের খেলায় মুগ্ধ হয়ে তাকে নাগরিকত্ব দিতে চায় মেক্সিকো!
এসব আর্টিকেল, নামকরা তারকাদের সুপারিশ কাজে লাগিয়ে ব্রাজিল, ফ্রান্স, মেক্সিকো, আমেরিকার নয়টি ক্লাবের সাথে নানান সময়ে চুক্তি করেন কাইজার। অবাক করা বিষয় হলো, সেই দলগুলোর মধ্যে আছে ফ্লুমিনেন্স, ফ্ল্যামেঙ্গোর মতো বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান ক্লাবগুলোও।
যখনই খেলার সময় আসতো, ইনজুরির নাটক সাজাতো কাইজার। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের অর্থ দিত তাকে ট্যাকেল করার জন্য। সময় চেয়ে নিতো পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে। একবার একটি ক্লাব বেশ চাপ দেয় তাকে। নামতেই হবে মাঠে। কাইজার নামেন। খেলা শুরুর আগে মারামারি লাগিয়ে দেন প্রতিপক্ষের এক সমর্থকের সাথে। ব্যস, রেফারির লাল কার্ড। বেঁচে যান কাইজার।
একেক সময় একেক নাটকের আশ্রয়ে পার করেন বছরের পর বছর। আর ওদিকে বন্ধুরা ছাপাতো রঙচটা আর্টিকেল। তাই একটি ম্যাচেও মাঠে না নেমেও কার্লোস কাইজার বনে যান তারকা। আজকের দিনে হলে হয়তো এতটা সুযোগ পেতেন না। তাতে অবশ্য সবচেয়ে মিথ্যাবাদী ফুটবলারটাকেও পাওয়া হতো না ফুটবল দুনিয়ার।