৯ মাস পর মহাকাশ থেকে যেভাবে ফিরলেন দুই নভোচারী

প্রায় ৯ মাস মহাকাশে থাকার পর অবশেষে সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরেছেন নাসার দুই নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনি উইলিয়ামস। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় স্পেসএক্সের ‘ক্রু ড্রাগন ফ্রিডম’ মহাকাশযানে করে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার উপকূলে অবতরণ করেন। দীর্ঘ সময় মহাকাশে থাকার ফলে এই মিশন বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এএফপির খবর।
স্পেসএক্সের ক্যাপসুলটি অবতরণের সময় নভোচারীদের সঙ্গে ছিলেন আরও দুই ক্রু সদস্য, নাসার নভোচারী নিক হেগ ও রুশ মহাকাশচারী আলেকজান্ডার গরবুনভ। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় তীব্র ঘর্ষণের ফলে ক্যাপসুলটির তাপমাত্রা প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ২ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত পৌঁছে যায়। অবশেষে আগুনের শিখার মতো ছুটে আসা ক্যাপসুলটি সফলভাবে প্যারাশুটের মাধ্যমে সমুদ্রের বুকে ভেসে ওঠে।

সফল অবতরণের পর নাসার গ্রাউন্ড টিম উৎফুল্লভাবে তাদের স্বাগত জানায়। উদ্ধারকারীরা ছোট বোট নিয়ে দ্রুত ছুটে যায়। এ সময় ক্যাপসুলটির পাশে ডলফিনের একটি দলকে ঘুরতে দেখা যায়। একপর্যায়ে বড় উদ্ধারকারী জাহাজে তুলে আনা হয় ক্যাপসুলকে, এরপর ধাপে ধাপে মহাকাশচারীদের বের করে আনা হয়। সবাই সুস্থ থাকলেও তাদের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সহায়ক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। এরপর হেলিকপ্টারে করে তাদের হিউস্টনে নিয়ে যাওয়া হবে, যেখানে তারা পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত হবেন এবং শারীরিক অবস্থার নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হবে।
নাসার ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্টালবানো বলেন, ‘তাদের ধৈর্য ও অভিযোজন ক্ষমতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এটি একটি অবিশ্বাস্য যাত্রা ছিল।’
জোয়েল আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকাকালীন নভোচারীরা ১৫০টি পরীক্ষা পরিচালনা করেছেন এবং ৯০০ ঘণ্টার গবেষণা করেছেন।
অপ্রত্যাশিত দীর্ঘ অভিযান
২০২৩ সালের জুন মাসে বোয়িং-এর ‘স্টারলাইনার’ মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) যান উইলমোর ও উইলিয়ামস। এটি একটি স্বল্পমেয়াদী পরীক্ষামূলক মিশন ছিল, তাদের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ফিরে আসার কথা ছিল। তবে স্টারলাইনারের ইঞ্জিনজনিত সমস্যার কারণে তারা আটকে পড়েন মহাকাশে এবং নভোযানটি খালি অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরে আসে।

ফলস্বরূপ নাসা তাদের ফেরাতে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং স্পেসএক্সের কুরু-৯ মিশনের সঙ্গে তাদের সংযুক্ত করে। অবশেষে কুরু-৯ মিশনের অংশ হিসেবে নিক হেগ ও আলেকজান্ডার গরবুনভ মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছানোর পর তাদেরকে পৃথিবীতে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়।
নতুন রেকর্ডের পথে
উইলমোর ও উইলিয়ামস মহাকাশে মোট ২৮৬ দিন অবস্থান করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের নভোচারীদের জন্য অন্যতম দীর্ঘ সময়। মার্কিন নভোচারী ফ্রাঙ্ক রুবিও একক মিশনে ৩৭১ দিন মহাকাশে কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম মিশনের রেকর্ড ধরে রেখেছেন। অন্যদিকে, বিশ্বের সর্বোচ্চ একক মহাকাশ মিশনের রেকর্ড এখনও রুশ নভোচারী ভ্যালেরি পলিয়াকভের, যিনি টানা ৪৩৭ দিন মহাকাশে কাটিয়েছিলেন।
রাজনৈতিক বিতর্ক
এই দীর্ঘ মহাকাশ মিশন রাজনৈতিকভাবেও আলোচনার জন্ম দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্পেসএক্স প্রধান এলন মাস্ক দাবি করেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মহাকাশচারীদের ফেরাতে দেরি করেছেন। তবে নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফেরানোর পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি এবং সবকিছু পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী হয়েছে।
এর আগে নভোচারীদের নিয়ে ট্রাম্পের কিছু মন্তব্য হাস্যরসের জন্ম দেয়। তিনি উইলিয়ামস সম্পর্কে বলেন, ‘ওই মহিলার চুল বন্যভাবে উড়ছিল।’ আবার রসিকতা করে বলেন, ‘আশা করি, তারা পরস্পরকে পছন্দ করে, হয়তো ভালোবাসেও।’

এদিকে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নভোচারীদের অবতরণের একটি ভিডিও শেয়ার করে হোয়াইট হাউস জানায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি মহাকাশে ৯ মাস ধরে আটকে পড়া মহাকাশচারীদের উদ্ধার করবেন। আজ সফলভাবে তারা পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন।
অবশেষে সফল অবতরণের মাধ্যমে নাসার এই জটিল মিশনের সমাপ্তি ঘটল, যা ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।