পর্যটকের ভিড় কমাতে চায় ভেনিস

প্রতিবছর প্রায় তিন কোটি পর্যটকের আনাগোনা থাকা শহরে বসবাসের অভিজ্ঞতা কেমন? পর্যটকের এমন আধিক্যের কারণে হিমশিম খাচ্ছে ভেনিস। যেমন- বাড়িভাড়া স্থানীয়দের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত কয়েকবছর ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে ইটালির লেগুন শহরটি। কিন্তু সেগুলো কি কোনো কাজে আসছে?
অসাধারণ স্থাপত্য, শত বছরের পুরনো ইতিহাস আর অনেক খালের কারণে ভেনিস ইটালির সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য৷। কিন্তু পর্যটনের বাড়াবাড়ি নিত্যদিনের সমস্যা। পর্যটকদের ঢল সামলাতে কিছু কৌশল হাতে নিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ। ভেনিসীয় ট্যুর গাইড জ্যুসেপিনা জ্যদিছে আমাদের কাছে কৌশলগুলো ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘ভেনিসে বিগত বছরগুলোতে অনেক নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে শহরে প্রবেশের জন্য ফি চালু করা হয়েছিল, যা এ বছরও আবার চালু করা হবে। এটা যারা একদিনের জন্য শহরে ঘুরতে আসেন তাদের জন্য বেশি করা হচ্ছে এই আশায় যে যাতে দৈনিক পর্যটকের সংখ্যা কমে যায়।’’
একদিনের জন্য ভেনিসে আসা পর্যটকদের এখন কোনো কোনোদিন দশ ইউরো অবধি এন্ট্রি ফি দিতে হবে। তবে এই অর্থ পর্যটকদের সংখ্যা কমাবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। গত বছর থেকে ট্যুর গ্রুপের আকারও সীমিত করে শহর কর্তৃপক্ষ।
জ্যুসেপিনা জ্যদিছে বলেন, ‘ট্যুর গাইডসহ একটি টিমে সদস্য সংখ্যা ২৫ জন হতে হবে। আগে এটা আরো অনেক বেশি- ৫০ জন অবধি হতে পারতো। আমি বিশাল গ্রুপ দেখেছি। কিছু এজেন্সি এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কারণ এখন ৬০ জনের জন্য দুজন ট্যুর গাইড দরকার হবে।’
আর শুধু এগুলোই পর্যটন সম্পর্কিত বিধিনিষেধ নয়। ২০২১ সালে ভেনিস লেগুনে বড় ক্রুজ শিপ নোঙ্গর করা নিষিদ্ধ করেছিল।
কিন্তু এ ধরনের বিধিনিষেধ কি পর্যটকদেরকে ভ্রমণ থেকে বিরত রাখে? সম্ভবত না, তবে ভিন্নমতও রয়েছে। এক পর্যটক বলেন, ‘একজন পর্যটক হিসেবে আমি মনে করি পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে আপনি যদি সেটা ফি দিয়ে রক্ষা করতে পারেন তাহলে ভালো। আমি প্রতিদিন এখানে আসি না।’
আরেক পর্যটকের মতে, ‘বাড়তি ফি খুবই ভালো ব্যাপার৷ আশা করছি এটা দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ঐতিহ্য ও স্থাপনা রক্ষা করা যাবে।’
অতিরিক্ত পর্যটন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ভেনিসীয়রা প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করছে এবং নিজস্ব সমাধান নিয়ে আসছে।
‘উই আর হিয়ার ভেনিস’ নামের সংগঠনের জেইন দ্য মোস্তো মনে করেন এন্ট্রেস ফি সমাধান নয়। তিনি বলেন, ‘এন্ট্রি টিকিট হচ্ছে ভেনিসকে পুরোপুরি পর্যটন গন্তব্য হিসেবে দেখার এবং পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ আয়ের মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। ভেনিসের উচিত শহরটির বাসিন্দাদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে উদ্যোগ নেয়া। ভেনিসের ক্ষেত্রে বিষয়টি ঢালাও পর্যটন নয়। ভেনিসের বাসিন্দা ক্রমশ কমে যাচ্ছে যা মূল সমস্যা।’
ভেনিসিয়া ডটকমের অ্যাক্টিভিস্টরা শহরের কেন্দ্রে একটি মনিটর স্থাপন করেছেন যেখানে বাসিন্দাদের হালনাগাদ সংখ্যা প্রদর্শন করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে নগরবাসীর সংখ্যা এক লাখ থেকে কমে পঞ্চাশ হাজারে পৌঁছেছে।
ভেনিসিয়া ডটকমের অ্যাক্টিভিস্ট মাত্তেও সেকি ঢালাও পর্যটন বন্ধে বেশ কয়েকবছর ধরে আন্দোলন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাধান হচ্ছে ব্যস্ত দিনগুলোতে ভেনিসে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া। ভেনিসের মধ্যে অনেক মানুষ৷ আমি দুঃখিত। আমরা পর্যটক পছন্দ করি, কিন্তু কিছু দিনে টিকে থাকার মতো পরিস্থিতিও থাকে না, তখন প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে।’
ভেনিস কীভাবে বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত থেকেও নিজের স্বকীয়তা ধরে রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলমান। এই লেগুন সিটিতে পর্যটকদের উপরে বিধিনিষেধের বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?