আম্পান আতঙ্কে পশ্চিমবঙ্গে শেকল দিয়ে বাঁধা হলো ট্রেন

ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আম্পান। পশ্চিমবঙ্গের উপকুলবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে আম্পানের। এই পরিস্থিতিতে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হলো ট্রেন। ভারতের দক্ষিণ পূর্ব রেল শাখার বিভিন্ন স্টেশনে ও ইয়র্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনগুলোর চাকা বেঁধে ফেলা হয়েছে। ঘুর্নিঝড় আম্পানের জন্যেই এই সতর্কতা বলে দক্ষিণ পূর্ব রেল সুত্রে জানানো হয়েছে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় ফণীর সময়েও আগাম সতর্কতা হিসাবে ট্রেনের চাকা শেকল দিয়ে বাঁধা হয়েছিলো। এবারও দেখা গেলো পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শালিমার স্টেশনে সেই একই ঘটনা। আম্পান পূর্ববর্তী আইলা ও বুলবুলের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। তবে ১৯৯৯ সালের ওড়িশার পারাদ্বীপের ঘূর্ণিঝড়ের থেকে কম শক্তিশালী এটি।
আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলায় সম্প্রতি যে দুটি ঝড় আছড়ে পড়েছিলো সেই বুলবুল ও আইলার থেকেও ভয়ঙ্কর ক্ষতি করতে পারে এটি। ২০০৯ সালে বাংলার বুকে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আইলা। ঘণ্টায় ১১২ কিমি বেগে আছড়ে পড়েছিলো দুই ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূলে। ২০০৯ সালের ২৫ মে সব তছনছ করে দিয়েছিলো আইলা। সেই ক্ষত এখনো শুকায়নি বাংলার বুকে। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ফের আছড়ে পড়ে বাংলার উপকূলে। সেবার সাগরের অদূরেই বকখালি ও ঝড়খালিতে তাণ্ডব চালায়। তবে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে প্রবেশ করলেও, তার ক্ষমতা অনেকটা কমিয়ে করে দেয় সুন্দরবন। ফলে খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি বুলবুল।
তবে ১৯৯৯ সালের পারাদ্বীপের ঘূর্ণিঝড় লেভেল ফাইভ স্তরে পৌঁছে গিয়েছিল। সেই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ কিমি। ৩০ বছরের ইতিহাসে এমন ঝড় আসেনি ভারতের কোনো রাজ্যে। সেই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালে গোনু এবং ২০১৯ সালে কিয়ার দুরন্ত ঘূর্ণি নিয়ে ধেয়ে এলেও, তা আছড়ে পড়েনি স্থলভাগে। আরব সাগরেই দুর্বল হয়ে পড়ে ঝড় দুটি।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানকে পারাদ্বীপের সমগোত্রীয় ঝড় বলে ব্যাখ্যা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আইলা দ্বিতীয় স্তরের ঝড়। কিন্তু পারাদ্বীপের মতো আম্পানকে পঞ্চম স্তরের ঝড় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই দুই ঝড়কে এক্সট্রিমসিভিয়ার সাইক্লোন বলে অভিহিত করা হচ্ছে। বুধবার আম্পান পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন ওডিশায় এসে স্থলভূমিতে আছড়ে পড়তে পারে। পশ্চিমবঙ্গে ঝড়ের গতিবেগ প্রবল হতে পারে। আর সেই কারণে সাইক্লোনের দাপটে এগিয়ে যেতে পারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন। যার জেরে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
মঙ্গলবার বিকেলের রেকর্ড বলছে, আম্পান পশ্চিমবঙ্গের দীঘা থেকে ৬৩০ কিলোমিটার আর কলকাতা থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। বুধবার রাতের দিকে পশ্চিমবঙ্গের বকখালির পূর্বদিক দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করবে এই ঝড়। ল্যান্ডফলের সময় তার সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘন্টায় ১৮৫ কিলোমিটার।