ইউক্রেনে রুশ সেনা মোতায়েন ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ : যুক্তরাষ্ট্র

রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুটি রুশপন্থি অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো। এমনকি স্বীকৃতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে সেনা পাঠানোর নির্দেশও দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে রাশিয়ার সমালোনায় সরব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে পূর্ব ইউক্রেনে রুশ সেনা মোতায়েনকে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ এবং যুদ্ধের অজুহাত সৃষ্টিতেই বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
আজ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, রাশিয়ার নেওয়া পদক্ষেপের কারণে সমগ্র ইউক্রেন, সমগ্র ইউরোপ এমনকি সারা বিশ্বেই মারাত্মক ফলাফল দেখা দেবে।
ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় দেড় লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন রেখেছে প্রতিবেশী রাশিয়া। এর মধ্যে ট্যাংক ও কামানসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুটি রুশপন্থি অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় অঞ্চল দু’টি সেনা পাঠানোরও ঘোষণা দেন তিনি। পুতিনের দাবি, রুশ সেনারা পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চল দুটিতে ‘শান্তি রক্ষার কাজ’ করবে।
সোমবার রাতের বৈঠকে লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন মিনস্ক চুক্তিকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন। তিনি (পুতিন) যে এখানেই থেমে যাবেন, সেটি আমরা বিশ্বাস করি না।’
অন্যদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের জন্য আমরা এখনও কূটনৈতিক পথ খোলা রেখেছি। যাইহোক, ডনবাসে (দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক) নতুন করে রক্তপাত হতে পারে, এমন কোনো কিছু আমরা চাই না।’

রয়টার্স বলছে, সোমবারের বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য দেশই রাশিয়ার সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে বিবদমান সকল পক্ষকে শান্ত থাকতে এবং উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে চীন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের পদক্ষেপকে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা এবং একইসঙ্গে জাতিসংঘ ঘোষণার পরিপন্থি। তিনি সব পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমন ও কূটনৈতিক পন্থায় সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানান।
এ ছাড়া পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের স্বঘোষিত দুটি প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, পুতিনের এ পদক্ষেপ মিনস্ক শান্তি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক মতে সম্মত হয়ে বলেছেন যে, এ পদক্ষেপ জবাবহীন, ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাঁদের আলোচনা শেষে জার্মান চ্যান্সেলরের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপের যে দুটি অঞ্চলের স্বাধীনতার স্বীকৃতি রাশিয়া দিয়েছে, সেখানে অর্থনৈতিক অবরোধের ঘোষণা দিয়ে বলেছে, প্রয়োজন হলে তারা আরও অবরোধ দিতে প্রস্তুত।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পুতিনের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এটি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ন্যাটো জোটের প্রধান জেন্স স্টলেনবার্গ বলেছেন, রাশিয়ার এই উদ্যোগ ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতাকে আবারো খাটো করলো। একই সঙ্গে এটি মিনস্ক চুক্তিরও লঙ্ঘন করলো।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া মূলত ইউক্রেনে হামলার অজুহাত খুঁজছে।’