উত্তর আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পসহ সন্ত্রাসীরা সংগঠিত হচ্ছে : তাজিক প্রেসিডেন্ট

তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর মধ্য এশিয়ায় আফগানিস্তান-পাকিস্তানের সন্ত্রাসীদের ক্রমবর্ধমান হুমকি শুধু কাজাখস্তানের জন্যই মাথাব্যথার কারণ নয়, তাজিকিস্তানের অভিযোগ—এ অঞ্চলের ধর্মনিরপেক্ষ সমাজকে আক্রমণ করতে আফগানিস্তানে সংগঠিত হচ্ছে সন্ত্রাসবাদীরা। দি ইকোনমিক্স টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
সীমান্ত সংযোগ থাকা সত্ত্বেও তাজিকিস্তান আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি। দুশানবে বলছে, এশিয়ার প্রজাতন্ত্র এবং ইউরেশীয় রাজ্যগুলোর দক্ষিণ সীমান্তের অংশে ছয় হাজারের বেশি সন্ত্রাসী সংগঠিত হয়েছে। বিদেশে ভারতের প্রথম সামরিক ঘাঁটি রয়েছে তাজিকিস্তানে।
গত সোমবার সিএসটিও শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইমোমালি রহমান দাবি করেছেন, আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বে যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থার দেশগুলোর দক্ষিণ সীমান্তের কাছে ছয় হাজারের বেশি জঙ্গি রয়েছে। তাঁর মতে, সিএসটিও’র দক্ষিণ সীমান্তে সন্ত্রাসীদের জন্য ক্যাম্প ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৪০টির বেশি।
তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর ইমোমালি রহমান আফগানিস্তান থেকে মধ্য এশিয়ায় বিদ্রোহীদের ছড়িয়ে পড়া নিয়ে সতর্ক ছিলেন।
রাশিয়ার সন্ত্রাস প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞেরা দি ইকোনমিক্স টাইমসকে বলেছেন, আফগান তালেবান সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সীমান্ত বরাবর উত্তর আফগানিস্তানে সংগঠিত উপায়ে সশস্ত্র জঙ্গি এবং আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞেরা দাবি করেছেন—কাজাখস্তানে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে আফগান তালেবান বিরূপ নয়।
আফগানিস্তানের রাশিয়ান বিশেষজ্ঞ, রাশিয়ান সোসাইটি অব পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্টের অ্যানালিটিক্যাল সেন্টারের পরিচালক আন্দ্রেই সেরেঙ্কো আফগানিস্তানের জটিল ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি এবং এ ধরনের ঘটনার প্রভাব সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।
রাশিয়া, ভারত, তাজিকিস্তান ও ইরান ছাড়াও অন্যান্য মধ্য এশিয়ার দেশগুলো তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে। মস্কো মধ্য এশিয়া ও ইউরেশিয়ায় সন্ত্রাসী আগ্রাসন কার্যকলাপ থেকে সতর্ক রয়েছে। তালেবানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের পরামর্শ দিলেও তারা এখনও তাতে সফল হতে পারেনি।
ভারতীয় সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞেরা ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং কাজাখস্তানে হামলায় আইএসআই’র ভূমিকা বিশ্লেষণ করছেন। সূত্রের বরাতে দি ইকোনমিক্স টাইমস জানিয়েছে, ইসলামিক স্টেট-খোরাসান (আইএস-কে) ও হাক্কানি নেটওয়ার্ককে উৎসাহিত করছে আইএসআই। উচ্চপদস্থ সূত্র দি ইকোনমিক্স টাইমসকে ইঙ্গিত দিয়েছে, আইএস-কে আর্থিকভাবে সমর্থনপুষ্ট সন্ত্রাসী, যারা কাজাখস্তানে তাণ্ডব চালিয়েছিল।

কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ গত সোমবার যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থার (সিএসটিও) একটি ভিডিও কনফারেন্স সম্মেলনে বলেন, কাজাখস্তানে সাম্প্রতিক সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ জন নিহত হন। এক হাজার ৩০০ জনের বেশি আহত হন। দুর্ভাগ্যবশত, বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।
টোকায়েভে আরও জানান, এক হাজার ২৭০টিরও বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একশোটিরও বেশি শপিং মল ও ব্যাংক লুট করা হয়েছিল। পুলিশের প্রায় ৫০০টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
কাজাখ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বিশাল ওই ক্ষতি একটি বিশেষ সরকারি কমিশন গঠনের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।’
তেল ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ কাজাখস্তান মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম ও ধনী রাষ্ট্র।