একটু উষ্ণতার জন্য লড়ছে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়ারা

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প ও সিরিজ আফটারশকে ১৯ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। দুর্ঘটনার তিনদিন পর বৃহস্পতিবার তীব্র ঠান্ডা ও ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ধ্বংসস্তূপের মাঝে আটকে পড়া জীবিতদের বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
এখনও কয়েক হাজার মানুষ ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে জড়ো হয়ে খাবার ও পানির জন্য অপেক্ষা করছে।
উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও বেশি লোককে জীবিত বের করার জন্য তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
তুরস্কের আন্তাকিয়া শহরে কয়েক ডজন মানুষ শিশুদের পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণকারী একটি ট্রাকের সামনে সাহায্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আহমেত তোকগোজ বিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি হারানো কয়েক হাজার মানুষ তাঁবু, স্টেডিয়াম এবং অন্যান্য অস্থায়ী বাসস্থানে আশ্রয় পেয়েছে। তবে, এখনও অনেক মানুষ সোমবারেরসাত দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকে বাইরে রাত কাটাচ্ছেন।
ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘এই ঠান্ডায় বসবাস করা সম্ভব নয়। লোকেরা ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে কিছুটা উষ্ণতা পায়, তবে ক্যাম্পফায়ারগুলো পর্যাপ্ত উষ্ণতা দিতে অপ্রতুল। যদি মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে মারা না যায়, তবে তারা ঠান্ডায় মারা যাবে।’
এদিকে, ভূমিকম্পের পর বৃহস্পতিবার সকালে তুরস্ক থেকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় জাতিসংঘের সাহায্য পাঠানো প্রথম ট্রাক প্রবেশ করেছে। ছোট কিছু সাহায্য সংস্থা কিছু পণ্য পাঠিয়েছে।
শীতকালীন আবহাওয়া ও ভূমিকম্পের ফলে রাস্তা এবং বিমানবন্দরে হওয়া ক্ষতি, ইতোমধ্যে সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি গৃহযুদ্ধের ফলে বিপর্যস্ত অঞ্চলকে আরও বেশি বিধ্বস্ত করে ফেলেছে।
গৃহযুদ্ধ সিরিয়ার লক্ষাধিক লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং দেশটির অনেক মানুষ বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সাহায্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি আরও কয়েক লাখ মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত দিয়ে তুরস্কে পাড়ি জমায়।
অন্যদিকে, তুরস্কের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা খুব ধীর ছিল।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সরকার এই সংকটে অব্যবস্থাপনা করেছে এমন কোনো অভিযোগ যদি ওঠে, তবে আগামী মে মাসে হতে যাওয়া নির্বাচনে তিনি কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হবেন। তবে, এরদোয়ান বৃহস্পতিবারও ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা সফর করে সমালোচনা কমানোর চেষ্টা করেছেন।
এদিকে, সীমান্তের উভয় পাশে জরুরি কর্মীরা জীবিতদের খুঁজে বের করতে রাতভর কাজ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া বা মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পেতে অক্ষমদের বেঁচে থাকার আশা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।
তুরস্কের এলবিস্তান শহরে উদ্ধারকারীরা মানববন্ধন করেন।
সংবাদ সংস্থা আইএইচএ জানিয়েছে, দক্ষিণে আন্তাকায়া উদ্ধারকারীরা একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে হাজাল গুনার নামের এক তরুণীকে বের করেন এবং তার বাবা সোনার গুনারকেও উদ্ধার করেন। যখন তারা লোকটিকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তিনি তখন ফিসফিস করে উদ্ধারকর্মীদের বলেন যে ‘তার মেয়ে বেঁচে আছে’।
সেরাপ আর্সলান (৪৫) বলেন, ‘শহরের কোথাও কোথাও বুধবারে আটকে পড়া লোকদের ওপর পড়ে থাকা ভারী কংক্রিটের কিছু অংশ সরাতে শুরু করেছে যন্ত্রপাতি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজেরাই ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের প্রচেষ্টা অপর্যাপ্ত ছিল।’
তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, এক লাখ ১০ হাজারেরও বেশি উদ্ধারকর্মী এখনও উদ্ধার প্রচেষ্টায় অংশ নিচ্ছেন এবং ট্রাক্টর, ক্রেন, বুলডোজার ও খননকারীসহ পাঁচ হাজার ৫০০টিরও বেশি যানবাহন পাঠানো হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছে, সিরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রিত শহর আলেপ্পোতে উদ্ধারকর্মীরা বৃহস্পতিবার শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি ধসে পড়া ভবন থেকে সাতজনকে জীবিত এবং ৪৪ জনের লাশ উদ্ধার করেছে।

বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমে হোয়াইট হেলমেট নামে পরিচিত সিরিয়ার প্যারামেডিক গ্রুপ জানিয়েছে, ‘আমরা সময়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। সময় ফুরিয়ে আসছে। প্রতিটি সেকেন্ড মানে একটি জীবন বাঁচানো।’
গ্রুপটি বলেছে, তুরস্কের মতো উদ্ধার তৎপরতা ত্বরান্বিত করার জন্য সেখানেও ভারী যন্ত্রপাতির জরুরি প্রয়োজন।