করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে কলকাতার হাসপাতালে বাংলাদেশি নারী

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে এক বাংলাদেশি নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শ্বাসকষ্ট ও জ্বরসহ একাধিক উপসর্গ দেখা দিলে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই নারীকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ গতকাল বৃহস্পতিবার এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ওই নারীর স্বামী দুবাই থেকে ফিরেছেন। এরপরই ওই নারীর শরীরে জ্বর দেখা যায়। এরই মধ্যে সব ধরনের পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে ভগবানপুরে ইন্দোনেশিয়াফেরত এক যুবককে ঘিরে তৈরি হয়েছে সন্দেহ। তাঁর শরীরেও একাধিক উপসর্গ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে তাঁকেও আনা হচ্ছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে।
এদিকে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভারতে অন্তত ৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ ছাড়া সবাইকে একসঙ্গে কাজ করারও তাগিদ দেন তিনি।
পার্লামেন্টে গতকাল বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাস নিয়ে বিবৃতি দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে অযথা ভারতীয়দের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। করোনা মোকাবিলায় ভারত পুরোপুরিভাবে তৈরি রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এর মধ্যেই সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিন হাজার ৩৮৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৯৮ হাজার মানুষ। এর মধ্যে চীনে করোনাভাইরাসে মৃত বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪২ জনে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৫৫২ জনে পৌঁছেছে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, ৮০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ জনে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২১০ বলে জানা গেছে, যাদের মধ্যে আটজনের অবস্থা গুরুতর। জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে ওয়াশিংটন, ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়ায়। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান—নাসা তার কর্মীদের বাসায় থেকেই রিমোট ওয়ার্ক টেকনোলজিসের মাধ্যমে কাজের নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে হাজারো যাত্রীসহ দ্য গ্র্যান্ড প্রিন্স প্রমোদতরীকে আটকে রাখা হয়েছে।
এদিকে, ঝুঁকি মোকাবিলায় ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জরুরি করোনাভাইরাস বিলে অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ। অন্যদিকে, করোনাভাইরাস শনাক্ত করার যন্ত্রের ঘাটতির জন্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দায়ী করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার হোয়াইট হাউসে করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের বৈঠকে এমন অভিযোগ করেন তিনি।
ইউরোপের দেশ ইতালিতে করোনা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৪৮ জনের এবং আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮৫৮ জনে। এর মধ্যে ৩৫১ জনের অবস্থা গুরুতর। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশটির সব স্কুল। এ ছাড়া আগামী এক মাস জনপ্রিয় ফুটবল লিগ সিরি-আসহ সব ধরনের ফুটবল ম্যাচ দর্শক ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়।
ইরানে সরকারি হিসাব অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮ জনে এবং আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইরানের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ও সিরিয়ায় নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেইন শেখ আল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় তাঁর। তিনি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসাবিষয়ক সংবাদের ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডার এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের ৩১টি প্রদেশেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের তালিকায় রয়েছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, স্বাস্থ্যবিষয়ক উপমন্ত্রী ছাড়াও ২৩ জন পার্লামেন্ট সদস্য। এ ছাড়া ইরাকেও দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যায় চীনের পরের অবস্থানেই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২৮৪ জনে।
জাপানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটির ওসাকা ইউনিভার্সিটি ও বায়োফার্মাসিউটিক্যালস ফার্ম এনজেস যৌথভাবে ‘ডিএনএ ভ্যাকসিন’ তৈরিতে কাজ শুরু করেছে। তারা বলছে, সব সময় হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, হাঁচি বা কাশি টিস্যুপেপারে দিতে হবে। তৃতীয়ত, ব্যবহৃত টিস্যুটি দ্রুত ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।