গান্ধীর খুনি ‘দেশভক্ত’, বিজেপি সাংসদের মন্তব্যে তুমুল শোরগোল

মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারীকে ‘দেশভক্ত’ বলায় গুরুত্বপূর্ণ একটি সংসদীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বিতর্কিত সাংসদ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর।
পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে ‘দেশভক্ত’ বলায় শাস্তির মুখে পড়েন বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর। সম্প্রতি প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য করা হয়েছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গতকাল বুধবার ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে একটি বিল নিয়ে আলোচনার সময় ডিএমকে দলের সাংসদ এ রাজা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। সে সময় তিনি গডসের একটি মন্তব্য তুলে ধরে বলেন, ‘গডসে কেন গান্ধীকে হত্যা করেছিল, তা সে নিজেই বলে গেছে।’ এ রাজার বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে থামিয়ে দিয়ে প্রজ্ঞা ঠাকুর বলেন, ‘আপনি একজন দেশভক্তের উদাহরণ এ ক্ষেত্রে দিতে পারেন না।’
সাংসদ রাজা জবাব দেন, ‘গডসে নিজেই বলেছে, তার গান্ধীর ওপর রাগ ছিল। সেই রাগ সে ৩২ বছর ধরে পুষে রেখেছিল। গডসে গান্ধীকে হত্যা করেছিল, কারণ গডসে একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের সমর্থক।’
একপর্যায়ে প্রজ্ঞা ও রাজার মধ্যে প্রবল তর্ক বেধে যায়। প্রজ্ঞার তীব্র নিন্দা করতে থাকেন বিরোধী দলের সাংসদরা। এ সময় কয়েকজন বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞাকে বসে পড়তে বলেন। অবশেষে রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হন প্রজ্ঞা। পরে প্রজ্ঞা জানান, তিনি এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (আজ) জবাব দেবেন।
এ ছাড়া গডসেকে ‘দেশভক্ত’ বলেননি দাবি করে প্রজ্ঞা আরো বলেন, ‘কী বলেছি ভালো করে শুনুন। আমি উধম সিংকে (ভারতীয় বিপ্লবী) দেশভক্ত বলেছি।’
গডসেকে নিয়ে মন্তব্য করায় সংসদীয় কমিটি থেকে প্রজ্ঞা ঠাকুরকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেন বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জেপি নাড্ডা। এ ছাড়া তিনি জানান, অধিবেশন চলাকালীন বিজেপির সংসদীয় বৈঠকেও প্রজ্ঞা ঠাকুর যোগ দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরের বক্তব্যের সমালোচনা করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
রাজনাথ সিং বলেন, ‘নাথুরাম গডসেকে দেশপ্রেমিক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, এমন যেকোনো মতাদর্শের প্রতি আমরা নিন্দা জানাই।’
পাশাপাশি রাজনাথ সিং আরো বলেন, মহাত্মা গান্ধীর মতাদর্শ এখনো প্রাসঙ্গিক। এ সময় গান্ধীকে ‘পথপ্রদর্শক’ বলে উল্লেখ করেন রাজনাথ সিং।
এর আগে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে গডসে প্রসঙ্গে একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন প্রজ্ঞা ঠাকুর।
নির্বাচনের প্রচারে ভোপালে গিয়ে গডসেকে ‘প্রকৃত দেশভক্ত’ বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রজ্ঞা। বলেছিলেন, ‘নাথুরাম গডসে দেশভক্ত ছিলেন, আছেন আর থাকবেন। তাঁকে যাঁরা সন্ত্রাসবাদী বলেন, তাঁরা নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখুক। নির্বাচনেই তাঁরা উত্তর পাবেন।’
প্রজ্ঞা ভোপাল থেকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। পরে প্রজ্ঞার মন্তব্য নিয়ে ভারতে তোলপাড় শুরু হলে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কথায় তিনি ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন।
লোকসভা নির্বাচনের ওই ঘটনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘গান্ধীজি ও নাথুরাম গডসেকে নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তা অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ও সমাজের জন্য ভুল বার্তা বহন করে। তিনি (প্রজ্ঞা) ক্ষমা চেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁকে আমি কোনো দিনই পুরোপুরি ক্ষমা করতে পারব না।’