দিল্লিতে সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০

ভারত সরকারের পাস করানো বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিপক্ষে সংঘর্ষে গতকাল মঙ্গলবার রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল ভারতের রাজধানী দিল্লি। সেখানকার একটি হাসপাতালের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি আজ বুধবার জানিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে দিল্লিতে অন্তত ২০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। তবে নয়াদিল্লির দাঙ্গাকবলিত কয়েকটি এলাকায় আজ থমথমে নীরবতা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে দিল্লির চারটি এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। কারফিউ চলাকালে কাউকে প্রকাশ্যে দেখা গেলে গুলি করার নির্দেশ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দিল্লিতে সংঘর্ষে গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩। আজ বুধবার সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় আরো চারজনকে গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় আরো একজনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুনীলকুমার গৌতম। পরে বেলা বাড়লে আরো দুজনের মৃত্যু হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এ খবর জানিয়েছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের মধ্যেই দিল্লিতে চরম বিক্ষোভ শুরু হয়। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদি সরকার সিএএ পাস করানোর পর থেকেই বিতর্কিত আইনটির পক্ষে-বিপক্ষে দিল্লিতে বিক্ষোভ তুঙ্গে ওঠে। সমালোচকরা বলছেন, ভারতের অসাম্প্রদায়িক সংবিধান লঙ্ঘন করা সিএএ মুসলিমদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দিল্লি গতকাল মঙ্গলবারও ছিল অগ্নিগর্ভ। প্রকাশ্যেই চলেছে গুলি।
ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে-বিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে গত রোববার থেকে চলা সাম্প্রদায়িক এই সহিংসতায় ৭০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। কারফিউ জারির পাশাপাশি গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সিএএর বিরোধিতাকে ঘিরে অগ্নিগর্ভ দিল্লি। আগে বহুবার আন্দোলন বিক্ষোভ চললেও গত রোববার থেকে শুরু হওয়া এবারের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ভয়াবহতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সিএএর পক্ষে-বিপক্ষের সমর্থকদের এই সংঘাতে রক্তাক্ত হয়েছে রাজপথ। নিয়ন্ত্রণহীন উন্মত্ত বিক্ষোভকারীদের রোষে ঝরেছে প্রাণ। দোকানপাট, বাড়িঘরে চালানো হয়েছে লুটপাট, ভাংচুর আর অগ্নিসংযোগ।
দিল্লির অশোকনগর এলাকায় একটি মসজিদেও সহিংস আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তেজিত জনতার একজন হাতে পতাকা নিয়ে মসজিদের মিনারে উঠে এর একাংশ ভাঙার চেষ্টা করে।
জনতার তাণ্ডব দেখে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ও সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স নামানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সশস্ত্র জনতা লাঠি হাতে ও পাথর ছুড়ে তাদের বারবার পিছু হটতে বাধ্য করে। গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। বহু মানুষ বাড়ির ভিতরে তালা ঝুলিয়ে গৃহবন্দি অবস্থায় রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছে।
পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল রাতে জাফরাবাদ, মৌজপুর, চাঁদবাগ ও কারওয়াল নগরে কারফিউ জারি করে এসব এলাকায় কাউকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে আগামী এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। দিল্লিসংলগ্ন উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদেও ১৪৪ ধারা জারি হয়।
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সিপি প্রবীর রঞ্জন বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ, মৌজপুর, চাঁদবাগ ও করাবল নগরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সহিংসতার চেষ্টা করলেই গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি পুলিশ।’
এদিকে বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাসভবন ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখতে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানান তাঁরা। পরে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে তাঁদের সরিয়ে দিতে সফল হয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
গত রোববার থেকে শুরু হওয়া এই অশান্তি এখনো সামাল দিতে না পারায় খানিকটা বিপাকেই পড়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এমন উত্তেজনায় আহমেদাবাদে, ট্রাম্পের সফর নিয়ে তাঁর ব্যস্ততা নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। তবে গতকাল রাতে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন অমিত শাহ। এই বৈঠক শেষে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।