দেশের মানুষের ঠিকানা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে : মমতা

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধীতায় ফের পথে নামলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিরোধী শিবিরকে জবাব দিতে পাকিস্তানকে আগেই টেনেছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবার সেই পাকিস্তান ইস্যুকেই হাতিয়ার করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার শিলিগুড়িতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ মিছিল করার আগে পাকিস্তান নিয়ে বিজেপিকে তোপ দাগলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার সভামঞ্চ থেকে বিরোধীদের উদ্দেশে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে মমতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী কি পাকিস্তানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে গিয়েছেন? সমস্ত কথায় প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের কথা সামনে আনছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপি নেতারা বলছেন, পাকিস্তান চলে যাও, সব কিছুতেই পাকিস্তান। হিন্দুস্থান ভুলে গেছেন মোদি। হিন্দুস্থানে থেকে পাকিস্তান চর্চা করা হবে না বলেই সাফ জানিয়েছেন মমতা।
এর আগেও বিরোধীদের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তানের তুলনা করেছে বিজেপি শিবির। মমতার দাবি, ‘পাকিস্তানের মাদুলি আমাদের চাই না।’
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানকে সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আজ দেশবাসীর মনে প্রশ্ন উঠছে,পাকিস্তান থেকে প্রাণ হাতে নিয়ে এদেশে এসেছেন অনেকে, বাড়ির মেয়েদের জীবন বাঁচাতে চলে এসেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন বিক্ষোভ হচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তানে তাদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তা নিয়ে তাদের মুখ তালাবন্ধ।
নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য, ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান তৈরি হয়েছিল। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সেখানে অত্যাচার করা হয়েছে। তারা বাধ্য হয়ে এদেশে শরণার্থী হয়েছেন। কংগ্রেস ও তার শরিকরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু বলে না। বরং শরণার্থীদের বিরোধীতায় সভা ও সমাবেশ করছে ওরা। সংসদে যারা আজ বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তাদের বলতে চাই, আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানের অপকর্ম ফাঁস করার সময় এটা।
মমতা এদিন বলেন, পশ্চিমবঙ্গে কোনোভাবেই এনআরসি আর নাগরিকত্ব আইন তিনি চালু হতে দেবেন না। মমতা বলেন, এনআরসি, সিএএ চালু করে দেশের মানুষের ঠিকানা কেড়ে নিতে চাইছে মোদি সরকার।
মমতা বলেন, কেন্দ্রের মোদি সরকারের কাছে খাবার, চাকরি চাইলেই কেন্দ্র বলে, পাকিস্তানে চলে যাও। প্রধানমন্ত্রী কি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত? আমরা ভারতের কথা শুনতে চাই। আমরা পাকিস্তানের কথা শুনতে চাই না। এনআরসি ইস্যু নিয়ে এখনই না এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। পরিবর্তে নিয়ে আসা হয়েছে এনপিআর।
মমতা বলেন, ভবিষ্যতে দেশের মানুষের ঠিকানা থাকবে কিনা সন্দেহ। ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করতেই পথে নামা হয়েছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা মানবিকতার লজ্জা। আমাদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। মোদি সরকার কখনও বলছে, আধার কার্ড বানান। কখনও প্যান কার্ড! এখনও বলছে, আধার চলবে না। প্যান চলবে না। তাহলে কী চলবে? শুধু বিজেপির মাদুলি? যে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায়, কেন সেখানে আমাদের যেতে দেওয়া হয় না? আমরা ভারতীয় হিসেবে গর্ববোধ করি। এটা গণতন্ত্রের লজ্জা।
মমতা আরো বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, মা-বাবার জন্মের শংসাপত্র দেখাতে হবে। না দেখাতে পারলে বেরিয়ে যেতে হবে। ভোটার লিস্টে নানারকম গণ্ডগোল করার চেষ্টা চলছে। প্রত্যেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায় ভুলভ্রান্তি ধরা পড়ছে। বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।