ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’, তটস্থ পশ্চিমবঙ্গ

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। দুর্যোগ ঠেকাতে আগে থেকেই আটঘাট বেঁধেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন। তৈরি করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। আবহাওয়া দপ্তরের খবর অনুযায়ী, আজ শনিবার মধ্যরাতে ভারত ও বাংলাদেশের মাঝামাঝি স্থলভূমিতে আছড়ে পড়তে চলছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’।
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় গতকাল শুক্রবার থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকা দীঘা, সাগরদ্বীপ, কাকদ্বীপ, নামখানা ও সুন্দরবন এলাকায়। সতর্ক করা হয়েছে উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। দীঘা, মন্দারমনি ও তাজপুর সমুদ্র সৈকতে সকাল থেকে চলছে কড়া নজরদারি। পর্যটকদের হোটেলের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। বহু পর্যটককে এরই মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চলছে মাইকিং। প্রবল জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় দ্রুত মৎসজীবীদের ঘরে ফেরানো হচ্ছে। সমুদ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এদিন সকাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় প্রচণ্ড হাওয়া বইছে। শুরু হয়েছে মাঝারি মাপের বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া কার্যালয় জানিয়েছে, অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ছে ‘বুলবুল’। যা চলে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সন্নিকটে। এদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের নিকটবর্তী সমুদ্র উত্তাল হতে শুরু করেছে। নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আজ শনিবার পশ্চিমবঙ্গের স্কুলগুলো ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নদীপথে সব ফেরি চলাচল। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ‘বুলবুল’ আছড়ে পড়ার পর পুলিশ প্রশাসনসহ সব স্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ত্রাণ কেন্দ্রে পানি ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুদ রাখতে বলা হয়েছে। মাটির বাড়ি বা বিপজ্জনক বাড়ি খালি করে মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার রাত থেকেই পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলা পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে শহর কলকাতায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগ ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।
তবে ‘বুলবুল’ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে শক্তি বাড়িয়ে শনিবার মধ্যরাতের আগেই সেটি আছড়ে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ অতিপ্রবল আকার ধারণ করে। মধ্য বঙ্গোপসাগরে তখন এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ কিলোমিটার। রাতে তা বেড়ে ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটারে পৌঁছে যায়। দিল্লির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ‘বুলবুল’ এখন উত্তরমুখী হয়ে এগোচ্ছে। আজ দুপুরের মধ্যেই সেটি মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এরপর ‘বুলবুল’ বাঁক নিয়ে উত্তর-পশ্চিমমুখী হয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি চলে আসবে। স্বাভাবিকভাবেই সে সময় থেকে বাড়বে বুলবুলের দাপট।