পশ্চিমবঙ্গে বাসে দূরত্ববিধি মানা হচ্ছে না, সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা

নির্দেশনা ছিল—যত আসন, তত যাত্রী; তবে কেউ দাঁড়াতে পারবেন না। এমন বিধি মেনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা শহরে গতকাল সোমবার থেকে বাস চলার কথা ছিল। আগেই জানা গিয়েছিল, সরকারি বাসের সঙ্গে রাস্তায় নামতে পারে কিছু বেসরকারি বাসও। কিন্তু এদিন কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে অফিসের সময়ে বেসরকারি বাস প্রায় ছিলই না। চলেছে সরকারি বাস। যেসব বাস চলেছে, অফিসের সময়ে সেগুলোতে যাত্রীরা দাঁড়িয়েই গেছেন। অফিসগামীদের ভিড়ে বাসের মধ্যে দূরত্ববিধির বালাই ছিল না। তাতে আশঙ্কা বেড়েছে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের।
রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ সমস্যার ধীরে ধীরে সমাধান হবে। তবে মেট্রো ও লোকাল ট্রেন না চললে পুরো সমাধান হয়তো হবে না। সোমবার বৃহত্তর কলকাতায় ৩৬০টি সরকারি বাস চলেছে। আগামীকাল বুধবারের মধ্যে ৬০০টি বাস চলবে। আগামী ৮ জুনের মধ্যে এক হাজার ২০০টি বাস রাস্তায় নামবে। ১৭টি রুটের বেসরকারি বাসও এদিন রাস্তায় নেমেছে।’ সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় পশ্চিমবঙ্গের ভিআইপি রোডের এক নম্বর গেট বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেল অফিসযাত্রীদের ভিড়। কিন্তু বাস নেই। অফিসযাত্রীরা জানালেন, কেউ দাঁড়িয়ে আছেন এক ঘণ্টা, কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছেন তারও বেশি সময় ধরে। তাঁদের অভিযোগ, একটি কি দুটি বাসের দেখা মিললেও সেগুলোতে আসন ভর্তি হয়ে যাওয়ায় বাস স্টপে দাঁড়াচ্ছে না। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল সকাল ১০টা নাগাদ। অফিসযাত্রীরা জানিয়ে দিলেন, এবার তাঁরা রাস্তা অবরোধ করে বাস আটকাবেন। ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ বারাসাত থেকে উল্টোডাঙাগামী বাস আসতেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন অফিসযাত্রীরা। কন্ডাক্টর বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেন ঠিকই, কিন্তু কে শোনে কার কথা। হুড়মুড় করে যাত্রীরা উঠে পড়লেন বাসে। অগত্যা যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকলেও বাস রওনা হলো উল্টোডাঙার দিকে।
আবার অফিসের সময়ে বারাসাত থেকে গড়িয়াগামী বাসে উঠে দেখা গেল, দাঁড়িয়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। বাগুইআটি আসতেই আরো যাত্রীরা হুড়মুড় করে বাসে উঠতে শুরু করলেন। ভেতরে তখন ঠাসাঠাসি ভিড়। চালক বাস থামিয়ে জানিয়ে দিলেন, এত লোক নিয়ে বাস যাবে না। বাসের যাত্রীরাও অনড়। সাফ জানালেন, তাঁরা বাস থেকে নামবেন না। তাঁরা দাঁড়িয়েই যাবেন। প্রসেনজিৎ বসু নামের এক যাত্রী বলেন, ‘এক ঘণ্টা দাঁড়ানোর পর বাস পেয়েছি। দূরত্ববিধির কথা মাথায় রাখলে অফিসেই পৌঁছাতে পারব না। তাই ভিড় থাকলেও বাধ্য হচ্ছি বাসে উঠতে।’
কর্তব্যরত পুলিশ যাত্রীদের বোঝাতে এলেও কোনো লাভ হয়নি।
অভিষেক দাস নামের এক যাত্রী বলেন, ‘দুটি বাসে বসার জায়গা পাইনি। পরের বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কখন কর্মস্থলে পৌঁছাব, জানি না।’
এ দিন যেসব ডিপো থেকে বাস ছেড়েছে, সেখানে পুলিশ যাত্রী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাস ছেড়েছে শুধু বসে থাকা যাত্রীদের নিয়েই। অফিসযাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, তা হলে কি কেউ মাঝপথ থেকে বাসে উঠতে পারবেন না? অফিস খুলে গেছে, বাধ্য হয়ে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে, কেন পর্যাপ্ত বাস রাস্তায় নামল না?