পশ্চিমবঙ্গে শেষ হলো শেষ দফার ভোটগ্রহণ, গণনা ২ মে

করোনার আবহেই প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনে প্রথম দফার ভোট গ্রহণ শুরু হয় ২৭ মার্চ। মোট আট দফায় চলে ভোটগ্রহণ, যার শেষ দফা ছিল আজ বৃহস্পতিবার। এ দফায় মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও উত্তর কলকাতা জেলার ৩৫টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়।
কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোট শুরু হয় সকাল ৭ টায় এবং শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। এই দফায় মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৮৪ লাখ ৯৩ হাজার ২৫৫ জন। মোট প্রার্থী ২৮৩ জন। অষ্টম দফায় মোট ৭৫৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে শুধু বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ৬৪১ কোম্পানি। এই দফাতেই পুননির্বাচন হয় কোচবিহার জেলার শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রের ১২৬ নম্বর বুথেও। গত ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফায় সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনায় ওই কেন্দ্রটিতে ভোটদান স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর- এই আসন দুইটিতে দুই ভিন্ন দলের প্রার্থীর করোনায় মৃত্যু হওয়ার ঘটনায় ওই দুই কেন্দ্রেই ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। আগামী ১৬ মে সেখানে ভোট নেওয়া হবে। গণনা হবে আগামী ১৯ মে।
এদিন সকালে কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের ২৪৭ নম্বর বুথে ভোট দেন বিজেপি নেতা ও অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। ভোট দিয়ে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাই ভালোভাবে ভোট দিন, ভোট আমাদের অধিকার, এটাই আমাদের গণতন্ত্র।’
মিঠুন চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘এর আগে এত শান্তিপূর্ণ ভোট আমি আগে কখনো দেখিনি। আমি খুব খুশি। আমি সব নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অভিনন্দন জানাতে চাই।’
চৌরঙ্গী বিধানসভার অন্তর্গত বিবাদী বাগের ‘দ্য প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্ট জেনারেল’ অফিসে ভোট দেন রাজ্যপাল জগদীপ ধানকর। এ ছাড়াও একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ প্রার্থীরা এ দফায় নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
তবে শেষ দফার ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্ত কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ভোটের শুরুতে জোড়াসাঁকো বিধানসভার অন্তর্গত কলকাতার মহাজাতি সদনের সামনে বোমা বিস্ফোরণকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সেন্ট্রাল আ্যাভিনিউয়ের ওপর পরপর দুইটি বোমা ছোঁড়া হয়, এতে ব্যাপক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিবেক গুপ্তার অভিযোগ বিজেপি আশ্রিত দুর্বৃত্তরা গাড়িতে করে এসে বোমা ছোড়ে। ওই বিধানসভার অন্তর্গত রবীন্দ্র সরণিতেও বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। বিজেপি প্রার্থী মীনাদেবী পুরোহিতের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়, যদিও তার গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
বেলেঘাটায় তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষে হয়। রাজবল্লভপাড়ায় বাঁশ-লাঠি নিয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষের দিকে তেড়ে যায়, সেই সাথে বোতল ও পাথর বৃষ্টিও শুরু হয়। মাটিতে ফেলে কাঠ দিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগও ওঠে। এতে দুই পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হয়।
মানিকতলায় বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে ঘিরে বিক্ষোভের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কল্যাণের অভিযোগ তৃণমূল কাউন্সিলের ছেলে তার গাড়িতে হামলা চালিয়েছে। তৃণমূলের পাল্টা দাবি শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছিল কিন্তু বিজেপি প্রার্থী এসে অশান্ত করে তুলেছে।
চৌরঙ্গীর মেট্রোপলিটন স্কুলের একটি বুথে ঢোকার সময় তৃণমূল প্রার্থী নয়না ব্যনার্জিকে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাথে তর্কে জড়ান তিনি, ফলে সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায় সেখানে। বীরভূমের নানুরে বিজেপি প্রার্থী তারকেশ্বর সাহার গাড়িতে ভাঙচুড়েরর অভিযোগ ওঠে। ময়ূরেশ্বরে বিননগরী গ্রামে বিজেপি প্রার্থী শ্যামাপদ মন্ডলের ভাই বিশ্বজিৎ মন্ডলের ওপর হামলার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
তবে ভোটের সকালেই টুইট করে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটদানের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি লেখেন, ‘আজ বাংলায় অষ্টম দফার নির্বাচন হচ্চে। নাগরিকদের কাছে অনুরোধ, কোভিড বিধি মেনে নিজেদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করুন। গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হোন।’
আগামী ২ মে ভোট গণনা। ওই দিনই ঠিক হয়ে যাবে ‘নবান্ন’ এবার কাদের দখলে যাচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসই ফের ক্ষমতায় ফিরবে না-কি প্রথমবারের জন্য ক্ষমতায় আসবে বিজেপি।
পশ্চিমবঙ্গের সাথেই ওই দিনই আসামে ১২৬টি, কেরেলায় ১৪০টি, তামিলনাড়ুতে ২৩৪টি ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পডুচেরির ৩০টি আসনে বিধানসভার নির্বাচন ও দেশজুড়ে কয়েকটি উপনির্বাচনেরও ভোটগণনা হবে।