ফাঁসি হলো দিল্লির নির্ভয়ার ৪ ধর্ষক-খুনির

শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চরম নাটকীয়তা শেষে ফাঁসি কার্যকর হলো নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের চার অপরাধীর। সাত বছরের বেশি সময় আগে দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার এবং প্রাণ হারান প্যারামেডিকেল ছাত্রী নির্ভয়া।
দিল্লির তিহার কারাগারের মহাপরিচালক সন্দীপ গোয়েল জানান, আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ওই চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরপর ৩০ মিনিট দেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়। তিহারে এই প্রথম একসঙ্গে চারজনের ফাঁসি হলো। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবর শোনার পরই তিহারের বাইরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে উপস্থিত জনতা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।
নির্ভয়াকাণ্ডের অপরাধীদের ফাঁসি আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্তও চলে জল্পনা। আইনি সব ফাঁকফোকর ব্যবহার করে অপরাধীরা। ফাঁসির নির্দিষ্ট সময়ের মাত্র চার ঘণ্টা আগে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন নির্ভয়ার খুনিদের আইনজীবী। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বাতিলের আরজি ভারতের রাষ্ট্রপতি খারিজ করে দিয়েছেন। সে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতে নতুন আবেদনটি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটায় সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার শুনানি হবে বলে প্রাথমিকভাবে স্থির হয়। রাত ২টা ২০ মিনিট নাগাদ সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে পৌঁছান নির্ভয়ার অভিভাবকরা। যদিও তাঁদের আদালতের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে নিম্ন আদালতে ফাঁসির সাজা স্থগিত রাখার আবেদন খারিজ হওয়ার পর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় নির্ভয়াকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত চারজনের মধ্যে তিনজন। শুনানির জন্য সেটি গ্রহণ করেন আদালত। সে অনুযায়ী, রাতে তাদের আবেদনের জরুরি শুনানিতে সব বিচার-বিবেচনা করে তা খারিজ করে দেন বিচারপতি মোহনের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ।
আবেদনকারীদের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলেন, ‘এ আবেদন অন্তঃসারশূন্য। আপনি এটি দাখিলের আগে অনুমতি নিয়েছেন?’
আসামিদের আইনজীবী এর জবাবে বিচারপতিকে জানান, করোনাভাইরাসের কারণে তাঁর পক্ষে নথির ফটোকপি করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যুত্তরে বিচারপতি বলেন, ‘আদালত কীভাবে তাহলে খোলা আছে। আপনি আজ তিনটি কোর্টে উপস্থিত ছিলেন। ফলে আপনি এ কথা কখনই বলতে পারেন না, ফটোকপি করার মতো সুযোগ-সুবিধা ছিল না। আপনার বক্তব্য শোনার জন্য রাত ১০টায় আমরা এখানে উপস্থিত আছি।’ এর পরই আবেদন খারিজ করে ফাঁসি বহাল রাখার রায় দেন।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন প্যারামেডিকেলের ছাত্রী নির্ভয়া। এক নাবালকসহ ছয়জন মিলে নারকীয় অত্যাচার চালায় নির্ভয়ার ওপর। অত্যাচারের ভয়াবহতায় শিউরে ওঠে সারা ভারতসহ বিশ্ব। দোষীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয় গোটা ভারত। প্রতিবাদে ভারতের রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। সেই ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের মার্চ, অপরাধের সাত বছর তিন মাস পর ফাঁসি হলো গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত চারজনের। আরেক অপরাধী বাসচালক রাম সিংহ জেলের ভেতর আগেই আত্মঘাতী হয়েছে। অপর অপরাধী নাবালক হওয়ার তিন বছর সংশোধনাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়েছে।
এর আগে তিনবার নির্ভয়ার ধর্ষক-খুনিদের ফাঁসির তারিখ শেষ মুহূর্তে এসে পিছিয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মৃত্যু পরোয়ানা অনুযায়ী আজ শুক্রবার ভোরে তিহার জেলে অক্ষয় ঠাকুর (৩১), পবন গুপ্তা (২৫), বিনয় শর্মা (২৬) ও মুকেশ সিংকে (৩২) ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।