‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ শতাধিক ঘর ভাঙল কর্ণাটক সরকার

বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের ঘাঁটি রয়েছে, শুধু এমন সন্দেহে রাতের অন্ধকারে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতের বিজেপি শাসিত কর্ণাটক সরকার। কর্ণাটকের ইয়েদুরাপ্পা সরকারের সন্দেহ ছিল, বেঙ্গালুরুর বেল্লান্দুরের কাছে কারিয়াম্মা আগ্রাহারা অঞ্চলে বহু বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর বসবাস। যে কারণে কর্ণাটক পুলিশ ও স্থানীয় পৌরসভার কর্মীরা একযোগে এসে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়। পুলিশের বক্তব্য, বেআইনিভাবে ওই অঞ্চলে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছিল বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীরা। এ ঘটনায় বহু পরিবার রাস্তায় এসে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে।
পুলিশের দাবি, জমির মালিককে উৎখাতের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজকর্মীদের বক্তব্য, ওই এলাকায় যারা থাকত তাঁদের মধ্যে রয়েছে কর্ণাটকের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। এ ছাড়া সেখানে থাকত উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষজনও। তারা বেঙ্গালুরুতে গৃহকর্মী, নির্মাণকর্মী বা নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করে থাকে।
উৎখাত হওয়া বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে আইনজীবী বিনয় শ্রীনিবাস বলেছেন, যারা ঘরবাড়ি ভাঙতে এসেছিল, তাদের মধ্যে অনেকেই সাদা পোশাকে এসেছিল। তাদের বক্তব্য, তারা মারাঠাহাল্লি পুলিশের লোক, পৌরকর্মীদের সুরক্ষা দিতে এসেছে। কিন্তু এলাকায় কোনো পৌরকর্মীর দেখা পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা যখন নির্দেশের কপি দেখতে চায়, তখন ওই লোকগুলো বাড়ি ভাঙা বন্ধ করে।
স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি তোলে, অস্থায়ী বাড়িতে যদি বাংলাদেশিরা বাস করে, তাহলে তাদের প্রথমে চিহ্নিত করা হোক, তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সব বাড়ি ভাঙার দরকার কী? স্থানীয় বাসিন্দাদের সাফ কথা, ‘আমরা ভারতীয়, আমাদের কাগজপত্র আছে। পুলিশ এসে কোনো নোটিশ না দিয়ে বাড়ি ভাঙতে শুরু করে দিল।’
এখানে যারা থাকে, তারা আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তর কর্ণাটকের বাসিন্দা। অথচ কারো কথায় কর্ণপাত না করেই স্রেফ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের আস্তানা সন্দেহে ভেঙে ফেলা হলো প্রায় ২০০ বাড়িঘর।
তবে এ ঘটনার সূত্রপাত হিসেবে জানা যায়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ লিম্বাভালি। সেখানে তিনি দাবি করেন, বেঙ্গালুরুর কারিয়াম্মানা আগ্রাহারা এলাকায় অবৈধভাবে একটি বস্তি গড়ে তুলেছে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিরা। তার পরই ওই বস্তি ভেঙে ফেলে বেঙ্গালুরু পৌরসভা। পৌরসভার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই অবৈধ বস্তি গড়ে ওঠার ফলে এলাকায় শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। এ নিয়ে একাধিক অভিযোগ আসছিল। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই গত রোববার বস্তিটির শতাধিক ঝুপড়ি, ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলে পৌরসভা।