বিক্ষোভের তোয়াক্কা না করে ভারতে চালু নাগরিকত্ব আইন

চলমান বিক্ষোভের মধ্যেই ভারতজুড়ে চালু হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিএএ ২০১৯ সালের ১ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপধারা অনুযায়ী, ১০ জানুয়ারি এ আইন চালু করার দিন হিসেবে নির্ধারণ করল কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে শুক্রবার থেকেই ভারতে চালু হয়ে গেল সিএএ।
এই প্রথমবার প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সংখ্যালঘু অমুসলিম শরণার্থীদের ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। যদিও ধর্মের ভিত্তিতে এভাবে নাগরিক বিভাজনের বিরোধিতা করে আসছে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালাসহ একাধিক রাজ্য এই আইন কার্যকর হতে দেবে না বলে জানিয়েছে। এদিকে, বিতর্কিত এই আইনের মাধ্যমে ভারতের মতো ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দেশে প্রথমবার ধর্মকে নাগরিকত্বের মানদণ্ড হিসেবে তৈরি করা হলো।
সিএএ অনুযায়ী, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের মানুষ, যারা পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে ধর্মীয় নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছেন এবং ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে এসেছেন, তাঁরা আর অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচিত হবেন না। তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
যারা এই আইনটির বিরোধিতা করছে, তাদের দাবি, এই প্রথম ভারতবর্ষে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে, যা দেশের সংবিধান পরিপন্থী।
তবে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এ আইন চালুর পক্ষে জোর দিয়ে যাচ্ছে। বিজেপি জানিয়েছে, প্রতিবেশী তিন দেশের সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় নিপীড়নের মুখোমুখি হওয়ার পর ভারত আসা ছাড়া আর বিকল্প নেই।
এ আইনের বিষয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইনটির জন্য বিধিমালা তৈরি করা এখনো বাকি। এদিকে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে নতুন করে ভারতে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে টুইটবার্তায় এ বিষয়ে সমাধানের রাস্তা কী, তা জানানো হয়। মন্ত্রণালয় জানায়, ১৯৭১ সালের আগে থেকে যাঁরা ভারতে রয়েছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব প্রমাণে পূর্বপুরুষদের পরিচয়পত্র অথবা জন্মসনদের প্রয়োজন হবে না।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, নিরক্ষর নাগরিক, যাদের কাছে নাগরিক প্রমাণের কোনো নথিপত্র নেই, তাদের ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাক্ষ্য হলেই চলবে। অথবা স্থানীয় কোনো প্রমাণপত্র জমা দিলেই হবে।
অন্য একটি টুইটবার্তায় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নাগরিকত্ব প্রমাণে যাঁদের কাছে জন্ম বা জন্মস্থান অথবা উভয়েরই নথি রয়েছে, তাঁরা সেগুলো প্রমাণ হিসেবে জমা দিতে পারবেন। এর একটি তালিকা দেওয়া হবে, যার ফলে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে কোনো অসুবিধা হবে না।
এর আগে লোকসভা ও রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়। এর পরই দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। আর এ প্রতিবাদের মধ্যেই দেশজুড়ে কার্যকর হচ্ছে সিএএ।