‘ভারতজুড়ে এনআরসি’ প্রসঙ্গে অমিত শাহর ভিন্ন সুর

ভারতের নাগরিকপঞ্জি-এনআরসি নিয়ে ভোল পাল্টেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ জানালেন, ‘মোদি ঠিকই বলেছেন! ভারতজুড়ে এনআরসি করার বিষয়ে সংসদে বা মন্ত্রিসভায় কোনো আলোচনা হয়নি।’
দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছিলেন, দেশজুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তথা এনআরসির বাস্তবায়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বা সংসদে কোনো আলোচনাই হয়নি। তা নিয়ে হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল ভারতজুড়ে। মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তো এনআরসির বাস্তবায়নের কথা বলেছিলেন। মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘এনআরসি বাস্তবায়নের পর অনুপ্রবেশকারীদের উইপোকার মতো তাড়াব।’ এ ছাড়া অমিত শাহ কিছুদিন আগে কলকাতায় নেতাজি ইনডোরের সভায় বলেছিলেন, ‘শুধু বাংলা কেন, সারা দেশে এনআরসি হবে।’ সেই সুর ধরে পশ্চিমবঙ্গের দিলীপ ঘোষরাও বলতে শুরু করেছিলেন, সারা দেশে এনআরসি করে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হবে।
কিন্তু নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সেই অবস্থান থেকে অমিত শাহরা যে অনেকটাই পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন, তা গতকাল মঙ্গলবার অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গেল। গত রোববার দিল্লির রামলীলা ময়দানের সভা থেকেই পিছু হটার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ১৩০ কোটি দেশবাসীকে নিশ্চিত করতে চাই, এনআরসি নিয়ে বিরোধীরা সারা দেশে গুজব রটাচ্ছে।’
গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমিত শাহও তাই বললেন। অমিত শাহ বলেন, ‘বিরোধীরা অশান্তি তৈরি করতেই এ ধরনের ভুয়া কথা রটাচ্ছে।’ গতকাল মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি বা এনপিআরে সিলমোহর দিয়েছে। এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বলেন, ‘এনপিআরের সঙ্গে এনআরসির কোনো সম্পর্ক নেই। এর সঙ্গে সিএএ বা নাগরিকত্ব আইনেরও কোনো যোগ নেই। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যই নানা কথা বলা হচ্ছে।’
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জন মানচিত্র ছাড়া কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। রাজ্য সরকারের মধ্যে এ নিয়ে কোনো আশঙ্কা থাকলে তা সরিয়ে দিক। এনপিআরের তথ্য এনআরসিতে ব্যবহার করা যাবে না। দুটি প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো লেনদেন নেই। এনপিআরের জন্য কোনো নথি প্রয়োজন নেই।’
নরেন্দ্র মোদির রামলীলা ময়দানের বক্তৃতার পর গত রোববার বিকেলেই টুইটে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুজন দুরকম কথা বলছেন। এতেই তো মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।’
পর্যবেক্ষকদের মতে শুধু মমতা নন, অনেকেই এ নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছিলেন। সেটা কাটাতেই হয়তো মোদির কথাকেই ঠিক বলে পুরো বিষয়টি চাপা দিতে চেয়েছেন অমিত শাহ।