ভারতজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত, আরো ৩ জন নিহত

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় ভারতজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। একের পর এক আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বিভিন্ন রাজ্যে। আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভের পর উত্তরপ্রদেশ রাজ্যেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার কর্ণাটক রাজ্যের মেঙ্গালুরুতে দুজন ও উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌ শহরে একজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে চলমান বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল নয়জনে। এর মধ্যে আসাম রাজ্যে চারজন নিহত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
গতকাল লক্ষ্ণৌর অবস্থা কার্যত প্রশাসনের হাতের বাইরে চলে যায়। থানায় আগুন, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, এমনকি সংবাদমাধ্যমের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় পাল্টা লাঠি চালায় পুলিশ। ফাটানো হয় একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের শেল। জানা গেছে, উত্তরপ্রদেশের পুরোনো লক্ষ্ণৌর ডালিয়াগঞ্জ, হুসেনাবাদ, ছোট ইমামবাড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান বিক্ষোভকারীরা। শহরের পরিবর্তন চকে ২০টি মোটরবাইক, ১০টি গাড়ি ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। টিভি চ্যানেলের চারটি ভ্যান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হাসানগঞ্জ ও ঠাকুরগঞ্জে থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভেঙে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়ি। জলকামানের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে পুলিশ।
এদিকে, হজরতগঞ্জে জেলা প্রশাসকের অফিসে বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা। এর পর প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি অজয়কুমার লাল্লুকে আটক করে পুলিশ। এদিকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে লক্ষ্ণৌর বাইরেও। বারাণসীতে আক্রমণের মুখে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ ছাড়া শম্ভলে সরকারি ও বেসরকারি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এদিকে, কর্ণাটক রাজ্যের মেঙ্গালুরুতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। পরে এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। এ ছাড়া দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, পাটনা, চণ্ডীগড় ও আমেদাবাদে সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল-বিক্ষোভ করে সাধারণ মানুষ।

এ সময় হায়দরাবাদের চার মিনারের কাছে বহু বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। এদিকে বাম ও কংগ্রেসের ডাকা বনধে বিহারের পাটনা, দ্বারভাঙায় আটকে দেওয়া হয় ট্রেন। এর আগে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে দিল্লিও। ১৪৪ ধারা জারি করে, ইন্টারনেট বন্ধ রেখেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। আটক করা হয় বাম ও কংগ্রেস নেতাদের। আটক করা হয় কয়েকশ শিক্ষার্থীকেও।
এ ছাড়া জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনায় নিন্দার ঝড় ওঠে ভারতজুড়ে।
গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় দিল্লিতে মিছিলের ডাক দেয় বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠন। তাদের সঙ্গে শামিল হয় অন্যরাও।
সকাল ৯টা থেকে দিল্লির লাল কেল্লা ও মান্ডি হাউসের সামনে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের জমায়েত। মিছিল শুরু হওয়ার আগে ধরপাকড় করে পুলিশ। মান্ডি হাউস থেকে কনট প্লেস হয়ে যন্তরমন্তর যাওয়ার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয় পুলিশ। কিন্তু আন্দোলনকারীদের তুলনায় পুলিশের বাস কম থাকায় সবাইকে আটক করা যায়নি। রাস্তার দুপাশ দিয়ে এগোতে শুরু করেন অনেকেই। কনট প্লেসের বদলে বারাখাম্বা রোড ধরে যন্তরমন্তরের দিকে এগিয়ে যায় মিছিল। পরে যন্তরমন্তরের কাছে ব্যারিকেড থাকায় সেখানেই বসে পড়েন শিক্ষার্থীরা। লাল কেল্লা থেকে যন্তরমন্তর যাওয়ার চেষ্টা করে আরেকটি মিছিল। সেখানেও শুরুতেই ধরপাকড় শুরু করে দেয় পুলিশ। লালকেল্লাসংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারার মধ্যেই প্রতিবাদে শামিল হন শিক্ষার্থীরা।
এরই মধ্যে বাম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, ডি রাজা, সন্দীপ দীক্ষিত, যোগেন্দ্র যাদবকে আটক করে পুলিশ। এদিকে দিল্লির মোট ১৩টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া মান্ডি হাউস, সিলমপুর, জাফরাবাদ, মুস্তাফাবাদ, জামিয়ানগর, শারিনবাগ, বাওয়ানাসহ বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল সেবা বন্ধ করে দেয় পুলিশ।