ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সতর্কতা

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে প্রতিবাদে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংস আন্দোলন। আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। এ পরিস্থিতিতে ভারতের আসাম ও মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ভারতের এ সব অঞ্চলে দেশ দুটির নাগরিকদের পা না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষরের পরই আইনে পরিণত হয়েছে বিলটি। এরপর থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ বেড়েই চলছে।
প্রতিবাদমুখর হয়ে বিক্ষোভে নেমেছে আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের বাসিন্দারা। এদিকে গুয়াহাটিতে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা।
এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় বিপদ ঘটতে পারে। আর সে জন্য এ সব অঞ্চলে নাগরিকদের না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাজ্য। একই মত মার্কিন পরামর্শদাতাদের। দেশ দুটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ সময় উত্তর-পূর্ব ভারতের অগ্নিগর্ভ পরিবেশের মধ্যে পা না রাখাই শ্রেয়।
আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও। আজ শনিবার সকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে অবরোধের জেরে হাসনাবাদ শিয়ালদহ ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বহু ট্রেন। পাশাপাশি, বেলডাঙাতে বিক্ষোভের কারণে শিয়ালদহ থেকে ট্রেন শুধু কৃষ্ণনগর পর্যন্ত যাচ্ছে। বিক্ষিপ্ত সহিংসতার কারণে সদরদিঘির পোড়াডাঙা স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রেন। পাশাপাশি, সকাল থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অবরোধের কারণে জঙ্গিপুর স্টেশনেও ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে মহিপাল স্টেশনেও। এ ছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন স্টেশনে চলছে ট্রেন অবরোধ।
চলতি সপ্তাহে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে নেয়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুয়াহাটি। বহু নাগরিক এই আইনের ফলে হারিয়েছেন তাঁদের দীর্ঘদিনের নাগরিকত্ব। ফলে, বিক্ষোভের আঁচে পুড়েছে বহু সরকারি সম্পত্তি ও যানবাহন। মশাল মিছিল করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন হাজার-হাজার সাধারণ মানুষ। কারফিউ উপেক্ষা করেই প্রতিবাদে পথে নেমেছেন তাঁরা। এরই মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। ভারতের এমন পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলও।
গত শুক্রবার বাংলাদেশের যুগ্ম কমিশনারের গাড়িতে ভাঙচুর চালানোর খবর প্রকাশ্যে আসে। এ ছাড়া আগামী সপ্তাহে হতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক স্থগিত করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর দাবি করেছে, দেশ থেকে মুসলিম নাগরিকদের সরাতে ভারতের এই নয়া নাগরিকত্ব আইন যথেষ্ট বৈষম্যমূলক।