ভারতের মন্ত্রিসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস

ভারতের মন্ত্রিসভায় ‘সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল’ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। আজ বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করার পর সেটা পাস হয়ে যায়। এই বিলটি এখন সংসদে উত্থাপন করা হবে। এ নিয়ে সবুজ সংকেত দিয়ে দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
আজ বুধবার পার্লামেন্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সম্ভবত আগামী সপ্তাহেই বিলটি সংসদে আনা হতে পারে। ১৯৫৫ সালের ‘সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট’ সংশোধন করতেই ওই বিল আনা হচ্ছে।
বিল অনুযায়ী পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা সেসব দেশের সংখ্যালঘু, অর্থাৎ হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা ভারতে ছয় বছর থাকলেই নাগরিকত্ব পাবেন। আগে এই সময়সীমা ছিল ১২ বছর।
নাগরিকপঞ্জি আ এনআরসির মতোই এই বিলের বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএমসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তাদের দাবি, ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া যায় না। এর আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ সংসদে পেশ করলেও পাস করানো সম্ভব হয়নি। লোকসভায় পাস হলেও রাজ্যসভায় পাস করানো যায়নি।
সম্প্রতি ঝাড়খন্ডে নির্বাচনী জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ২০২৪ সালের আগেই পুরো ভারতে এনআরসি চালু করা হবে। অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে।
সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যেসব হিন্দু, শিখ, জৈন ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ভারতে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে। তবে অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও, মুসলিমদের ক্ষেত্রে কোনো কিছু বলা হয়নি। এ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সংসদে এর আগে বিরোধিতা করেছিল। তখন বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আসামে এনআরসি শুরু করা হলেও বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বীর নাম তালিকা থেকে বাদ যাওয়ায় বিজেপির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। রাজনৈতিকভাবে সেখানকার বিজেপি সরকার বিপন্ন বোধ করে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনে বিজেপি তিনটি কেন্দ্রেই হেরে গেছে। সেখানেও এনআরসি মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এবার সংসদে যদি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়ে যায়, তবে বিজেপির পক্ষ থেকে রাজনৈতিকভাবে কী পদ্ধতিতে তা প্রচার করা হবে, সেটাকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময়েই বিজেপির এজেন্ডা ছিল নাগরিকপঞ্জি তৈরি করা। আসাম সেই নাগরিকপঞ্জি তৈরির পরই ক্ষোভ শুরু হয়েছে দলের ভেতরে। কারণ নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়েছেন কয়েক লাখ হিন্দু। বিরোধীদের দাবি, ওইসব মানুষদের নাগরিকত্ব পাইয়ে দিতেই আনা হচ্ছে এই বিল। কারণ বিজেপি প্রকাশ্যেই বলে আসছে, তালিকা থেকে বাদপড়া হিন্দুদের কোনো চিন্তা নেই।
তবে এই সংশোধনী বিল নিয়ে আপত্তি রয়েছে উত্তর-পূর্বের কয়েকটি রাজ্যের। তাদের বোঝাতে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।