ভারতে আজ থেকে শর্তসাপেক্ষে লকডাউনে শিথিলতা

ভারতে আজ সোমবার থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেওয়া লকডাউনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শিথিলতা আনছে মোদি সরকার। তবে এ শিথিলতার ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, শিথিলতার সময় শর্ত ভঙ্গ করলে লকডাউনের শিথিলতা তুলে নিতে বাধ্য হবে সরকার।
কীভাবে লকডাউনে ছাড় দেওয়া হবে, তার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা তৈরি করে দিয়েছে মোদি সরকার। এতে বলা হয়েছে, ২০ এপ্রিল থেকে গ্রামাঞ্চলে কৃষক চাষাবাদের কাজ করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ বা দূরত্ব অবশ্যই মেনে চলতে হবে বলে জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে কৃষিকাজের সহায়তাকারী সামগ্রীর দোকানও খোলা রাখা যাবে বলে সরকারি নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলগুলো পুনরায় স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির হার্ডওয়্যার উৎপাদন ক্ষেত্র, মেডিকেল সরঞ্জাম তৈরির কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক করায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রেও সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ বা দূরত্ব মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মেডিকেল সরঞ্জাম তৈরির কারখানা, অ্যাম্বুলেন্স তৈরির কারখানা খোলা থাকবে।
অর্থনীতি সচল রাখতে ব্যাংকগুলো লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। ব্যাংকে দৈনিক লেনদেন এবং এটিএম পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিধি মেনে ১০০ দিনের কাজ চালু করা যাবে বলেও সরকারি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। কয়লা খনি, তেল উত্তোলন কেন্দ্র স্বাভাবিক থাকবে। খোলা থাকবে হাইওয়ে ধাবা (খাবারের দোকান) এবং ট্রাক মেরামতের দোকান। দুগ্ধজাত দ্রব্যের উৎপাদন এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হবে। মুদির দোকান, সবজির দোকান, মাছ, মাংস ও ডিমের দোকান খোলা থাকবে। সব ক্ষেত্রেই সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ বা দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৫৫৩ জনের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ায় ভারতে এখন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হলো ১৭ হাজার ৬১৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরো ৩৬ জনের। ফলে ভারতে মোট মৃতের সংখ্যা এসে দাঁড়াল ৫৫৯ জনে, যার মধ্যে সুস্থ হয়েছে দুই হাজার ৮৫৪ জন। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
ভারতে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে মহারাষ্ট্র রাজ্যে। সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে চার হাজার ২০৩ জনে। তাদের মধ্যে মৃত ২২৩ জন ও সুস্থ হয়েছে ৫০৭ জন।
অন্যদিকে, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দিল্লিতে করোনায় মোট আক্রান্ত দুই হাজার তিনজন। তাদের মধ্যে মৃত ৪৫ জন এবং সুস্থ হয়েছে ৭২ জন। রাজস্থানে মোট করোনায় আক্রান্ত এক হাজার ৪৭৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের ও সুস্থ হয়েছে ১৮৩ জন। তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত এক হাজার ৪৭৭ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের, সুস্থ হয়ে উঠেছে ৪১১ জন। মধ্যপ্রদেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত এক হাজার ৪০৭ জন, যার মধ্যে মারা গেছেন ৭০ জন ও সুস্থ হয়ে উঠেছে ১২৭ জন।
এদিকে, ভারতে ফের করোনা আতঙ্ক বাড়িয়ে এরই মধ্যে খোঁজ মিলেছে তৃতীয় বৃহত্তম করোনা হট স্পটের। ভারতের রাজধানী দিল্লির দক্ষিণ প্রান্তে একই জায়গায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩৮ জন। জানা যায়, দক্ষিণ দিল্লির তুঘলকাবাদ এক্সটেনশনে প্রথমে তিনজন করোনায় আক্রান্তের হদিস মেলে। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন মুদি দোকানদার।
এরপর ওই তিনজনের সংস্পর্শে কারা কারা এসেছিল, তা জানতে খোঁজ শুরু করে প্রশাসন। ওই এলাকায় পাঠানো হয় মেডিকেল টিমকেও। এরপর এলাকায় মোট ৯৪ জনকে পরীক্ষা করে ৩৫ জনের দেহে মেলে করোনাভাইরাস। সব মিলিয়ে দক্ষিণ দিল্লির তুঘলকাবাদে করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৩৮ জন। এ ঘটনার পরেই তুঘলকাবাদ এক্সটেনশনে প্রবেশের বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।