ভারতে করোনার চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসোন ব্যবহারের অনুমোদন

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসোন ব্যবহারে ছাড়পত্র দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এ ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, মাঝারি ও বেশি মাত্রায় অসুস্থদের ক্ষেত্রে তুলনায় কম খরচের এ স্টেরয়েড ব্যবহার করা যাবে। এতদিন আর্থরাইটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রে যন্ত্রণা উপশমের জন্য ডেক্সামেথাসোন ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়া ক্যানসারে আক্রান্তদেরও ডেক্সামেথাসোন দেওয়া হয়ে থাকে। এবার সে ডেক্সামেথাসোন প্রয়োগ করা হবে করোনায় আক্রান্তদের ওপর। সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভিরের ভারতীয় সংস্করণ ‘কোভিফর’ ইতোমধ্যেই ভারতের কয়েকটি রাজ্যে পৌঁছেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ ওষুধ কলকাতায় আসার কথা। রেমডেসিভিরের পর এবার ডেক্সামেথাসোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, এ দুটি ওষুধের কোনোটিই সরাসরি করোনার ওষুধ নয়। দুটি ওষুধই আক্রান্তদের ওপর প্রয়োগ করে আশাব্যঞ্জক ফল মিলেছে মাত্র। যেমন, যুক্তরাজ্যের ১৭৫টি হাসপাতালে সাড়ে ১১ হাজার রোগীর ওপর ডেক্সামেথাসোন প্রয়োগের গবেষণা চালিয়ে বেশ সাফল্যের মুখে দেখেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এতে অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। দেখা গেছে, অনেক কোভিড-১৯ রোগীর ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অতিসক্রিয়তাও মৃত্যুর কারণ হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ‘ইমিউনো সাপ্রেসিভ’ হিসেবে কাজ করবে ডেক্সামেথাসোন। অক্সফোর্ডের গবেষণায় ২৮ দিনে ১৭ শতাংশ মৃত্যুহার কমাতে পেরেছে এ স্টেরয়েড।
এদিকে ঘটনাচক্রে যে দিন ভারত ডেক্সামেথাসোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিল, সে দিন দেশটিতে আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিল করোনায় সংক্রমণের পরিসংখ্যান। ভারতে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৫৫২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩৮৪ জনের। সংক্রমণের হিসেবে বিশ্বে ভারত এখন চতুর্থ স্থানে। গত ছয় দিনে ভারতে এক লাখেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যেখানে প্রথম এক লাখ ছুঁতে ১০৯ দিন সময় লেগে গিয়েছিল। এদিন দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার পেরিয়ে গেছে। ২৪ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ দুই হাজার ৯৪৮ জন। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। ভারতে ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসের বলি হয়েছে ১৫ হাজার ৬৮৫ জন।
উপরিল্লিখিত পরিসংখ্যান তুলে ধরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বক্তব্য, ‘প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। আর লড়াই করতে চাইছেন না।’ নরেন্দ্র মোদি অবশ্য দেশের এ পরিসংখ্যানে সাফল্যই দেখছেন। এদিন মোদি বলেন, ‘চলতি বছরের শুরুর দিকে অনেকে বলেছিলেন, এ ভাইরাস আমাদের দেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু, লকডাউন, কেন্দ্রীয় সরকারের নানা পদক্ষেপ এবং জনতার লড়াইয়ের ফলে অন্য দেশের তুলনায় ভারত আজ অনেক ভালো জায়গায় আছে। সুস্থতার হার বেড়েই চলেছে। দেশের ৮৫ কোটি লোককে প্রায় ছুঁতেই পারেনি করোনা।’
সর্বভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের (এইমস) পরিচালক রণদীপ গুলেরিয়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সুরে বলেন, ‘আমাদের দেশে মৃত্যুর হার অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্রে এখনো প্রতিদিন ৪০ হাজার নতুন আক্রান্তের খোঁজ মিলছে।’
এ সবের মাঝেই দীর্ঘদিন পর গতকাল শনিবার বৈঠকে বসেছিল ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনের নেতৃত্বে। ভারতে করোনার পরীক্ষা আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ বৈঠকে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতের মোট আক্রান্তের ৮৫ শতাংশই আটটি রাজ্যে। এ পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের মন্ত্রিগোষ্ঠী। এ পরীক্ষায় ব্যবহার করা হবে র্যাপিড অ্যান্টিজেন কিট।
মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু, গুজরাটসহ ভারতের অন্য রাজ্যগুলোর করোনা-চিত্রও খুব একটা ভালো নয়। বিহারে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজারের কাছাকাছি। পুদুচেরি ও অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মীরা আক্রান্ত বলে জানা গেছে। কদিন আগেও আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল যে গোয়ায়, এদিন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। প্রায় সব প্রান্ত থেকেই আক্রান্তের খোঁজ মিলছে।